দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন চাকরি হারিয়েছেন
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একের পর এক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালিয়ে আলোচনায় আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন চাকরি হারিয়েছেন।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি গতকাল বুধবার জানানো হয়।
এর আগে শরীফকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি করে পটুয়াখালী পাঠানো হয়েছিল।
আদেশে বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা-২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২)তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দীন, উপসহকারী পরিচালক, দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
এ আদেশ গতকাল ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় শরীফ উদ্দিন ২০২১ সালের ১৬ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ওই বছরের ১৫ জুন রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়া ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঘটনায় ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেলসহ ছয় জন এবং ১২ জুন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বালিসহ ছয় জনের নামে মামলা করেন তিনি।
১০ জুন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় সাবেক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন শরীফ উদ্দিন।
এ মামলায় মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান ও সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তারও করে দুদক। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
২০২১ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়েসংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পিবিআই অফিস তৈরির জন্য এক একর জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে শরীফ উদ্দিনের তদন্তে।
কক্সবাজারের উন্নয়ন মহাপ্রকল্পগুলোর জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি, যাঁদের পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে নামে চট্টগ্রাম দুদক। পরে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বেশ কয়েকটি মামলাও করেছিলেন শরীফ উদ্দিন।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে খালাসি পদে ১৯ জনকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক কোটি দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। একই মামলায় দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খালাসি, ঠিকাদার, স্কুলশিক্ষক, পিয়ন, রেলের ড্রাইভারসহ আরও ৮ জনকে আসামি করা হয়।
গত বছরের জানুয়ারিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত থাকা একজন শীর্ষ দালাল ও সাবেক এক সার্ভেয়ারকে আটক করেছিলেন তিনি।
এভাবে নানা অভিযান পরিচালনা করে আলোচনায় আসে শরীফ উদ্দীনের নাম। এসব আলোচিত অভিযান তাঁর জন্য কাল হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
গত বছরের ১৬ জুন দুদক পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে মো. শরীফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। শরীফের এমন বদলি জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের।