দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিল, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ১
১০ দফাকে সামনে রেখে সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আজ শনিবার দলটি ঢাকার বাইরে সব জেলা ও মহানগরে সমমনা অন্যান্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এই কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচি পালনের সময় দেশের বেশ কিছু জেলায় ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। রয়েছে পুলিশি বাধার অভিযোগ। পঞ্চগড়ে বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে বিএনপিনেতা আব্দুর রশিদ আরেফিন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিন রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় বিএনপিকে কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তনের অনুরোধ জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে ঢাকার কর্মসূচি পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নেওয়া হয়।
এনটিভির প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে থাকছে এবারের প্রতিবেদন।
ময়মনসিংহ থেকে আইয়ুব আলী জানান, মহানগরের টাউনহল মোড়ে কেন্দ্রিয় কর্মসূচিতে উত্তর-দক্ষিণ জেলা ও মহানগরের উদ্যেগে গণমিছিল করেছে বিএনপি। আজ বেলা তিনটায় গণমিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা মাহবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলু, মহানগর আহ্বায়ক একেএম শফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহাব আকন্দ, এ কে এম মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমরা ১৪ বছর ধরে আন্দোলন করছি একটি দাবিতে। জনগণের ভোট জনগণকে ফেরত দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছি।’
মানিকগঞ্জ থেকে আহমেদ সাব্বির সোহেল জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার নেতৃত্বে মানিকগঞ্জে বিএনপির গণমিছিলে যোগ দেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। শহরের মডেল হাই স্কুল থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি বান্দুটিয়া বাজারে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নেতাকর্মীরা অবিলম্বে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সব নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।
ফরিদপুর থেকে সঞ্জিব দাস জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুরে বিএনপির গণ মিছিল কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়েছে। আর বেলা ১১টার দিকে শহরের কাটপট্টিতে বিএনপির জেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় কার্যালয়ের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে নেতারা বক্তব্য দিয়ে শেষ করেন গণমিছিলের কর্মসূচি।
এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিঙ্কু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, জেলা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদারেস আলি ইছা, সাধারণ সম্পাদক এ কে কিবরিয়া স্বপনসহ দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ঠাকুরগাঁও থেকে লুৎফর রহমান মিঠু জানান, জেলা বিএনপির আয়োজনে শনিবার বিকেলে শহরের দলীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় গান পরিবেশনের মাধ্যমে এ কর্মসূচির শুরু হয়। পরে দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূর্বের স্থানে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুর করিম, সহসভাপতি আল মামুন আলম, ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ, জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফুরাতুন্নাহার প্যারিস, জেলা যুবদল সভাপতি মহেবুল্লাহ আবু নুর, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর হোসেন তুহিন প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গা থেকে রফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় গণমিছিল কর্মসূচি শুরুর আগেই জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের আট নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে ও আশপাশের এলাকা থেকে এ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার নেতারা হলেন—জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা বিএনপির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, আইলহাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আবু হানিফ মেম্বার, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাজিব খান, জেলা ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কৌশিক আহমেদ এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আরমান খান।
জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন আটজনকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত ৪ ডিসেম্বর সদর থানা পুলিশের করা নাশকতা মামলায় সাতজনকে এবং নিবারণমূলক মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রোববার আদালতে সোপর্দ করা হবে।’
পঞ্চগড় থেকে সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ জানান, গণমিছিলকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বিএনপির এক নেতা নিহত হয়েছেন। পুলিশসহ আহত হন অর্ধশত নেতাকর্মী। আজ শনিবার দুপুরের পর পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত বিএনপি নেতার নাম আব্দুর রশিদ আরেফিন (৫০)। তার বাড়ি জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায়। তিনি ওই এলাকার খোরশেদ মুহুরীর ছেলে। তিনি ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার মরদেহ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে, তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা এখনই বলতে পারছি না।’