দেশীয় পদ্ধতিতে সিরাজগঞ্জে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় প্রায় দুই লাখ গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা হচ্ছে।
গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর গরু উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে অনেকটাই। এদিকে, সুষ্ঠু দাম নিশ্চিতে অ্যাপস তৈরির মাধ্যমে অনলাইনে ৩০ হাজার গরু বিক্রির পরিকল্পনা করেছে জেলা প্রশাসন।
সিরাজগঞ্জের গো-চরণ ভূমি শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন গরুর খামার ঘুরে ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এ বছর সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ শুরু করে খামারিরা।
খামারিরা জানায়, ১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা গড়ে ওঠে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। এই কারখানাকে ঘিরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়ায় গড়ে ওঠে শত শত গরুর খামার। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এসব খামারে গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত মোটাতাজা করা গরু প্রতি বছরেই দেশের কুরবানির পশুর চাহিদার অনেকটাই পূরণ করছে।
এ বছর জেলায় প্রায় দুই লাখ গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। অন্য বছর নিয়মিত খামারিদের পাশাপাশি কিছু মৌসুমী খামারি মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অবৈধ স্টেরয়েড হরমোন ব্যবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজা করতো। কিন্তু এই কাজে জনসচেতনতা ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের তৎপরতায় গত কয়েক বছর ধরে ধানের খর, সবুজ ঘাস, বিভিন্ন প্রকারের ভুসি, খৈল ও কিছু ভিটামিন খাইয়ে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে।
মহামারি করোনাভাইরাসের অজুহাতে গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় তিন থেকে ৪০০ টাকা। ফলে গরু মোটাতাজাকরণের ব্যয় বেড়েছে খামারিদের।
শাহজাদপুর উপজেলার সফল খামারি ও কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন সফল খামারি। আমার খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে শতাধিক গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। বর্তমানে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু মোটাতাজা করতে খরচ বেশি হচ্ছে। এজন্য এবার গরুর দামও একটু বেশি হবে।’
ভারত থেকে যেন দেশে গরু ঢুকতে না পারে এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ওই খামারি।
শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ি এলাকার খামারি রাব্বি প্রামাণিক জানান, কোরবানির জন্য এ বছর তিনি খামারে ৪৫টি গরু মোটাতাজা করেছেন। সবুজ ঘাস, খড়, গমের ও কালাইয়ের ভুসি, খৈল এবং ফিড খাইয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। গরুর হজমশক্তি বৃদ্ধি ও শারীরিক গঠনের জন্য জিংক খাওয়ানো হয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলার মশিপুর গ্রামের ভাই ভাই ডেইরি ফার্মের পরিচালক শাহান উদ্দিন বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমি ৩৪টি গরু কিনে নিয়ে এসেছি মোটাতাজা করে ভালো দামে বিক্রি করার জন্য। গরুগুলো আমি, আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা দেখাশোনা করছি। খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খরচ হচ্ছে বেশি। উন্নতমানের এই গরুগুলোর দাম তিন লাখ টাকা পার হবে বলে আশা করছি।’
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘প্রতি বছরই শাহজাদপুরে গরু মোটাতাজা করা হয়। এ বছরও শাহজাদপুরে ব্যাপকহারে গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবার খামারিদের খরচ বেড়েছে। গরুগুলো বিক্রির সুবিধার্থে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপস ব্যাবহার করে অনলাইনে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় করা হবে। এছাড়া ভারত থেকে আমাদের দেশে যাতে গরু ঢুকতে না পারে এজন্য প্রশাসন সতর্ক থাকবে।’