দেশের মোট ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী : গবেষণা
নভেল করোনাভাইরাসের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় থাকলেও দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ এখনই টিকা নিতে চান বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গতকাল মঙ্গলবার এই গবেষণার ফল তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ।
গবেষণায় বলা হয়, দেশের মোট ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী। তবে মনে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয় থেকে তারা শুরুতেই টিকা না নিয়ে, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তবেই টিকা নিতে চায়।
গত ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই গবেষণায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী তিন হাজার ৫৬০ জন উত্তরদাতা অংশ নেন। দেশের আট বিভাগের ১৬টি উপজেলা এবং ঢাকার সিটি এলাকা থেকে উত্তরদাতাদের বেছে নেওয়া হয়।
গবেষণা দলের প্রধান গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ এখনই টিকা নিতে আগ্রহী।
গবেষণার ফলের বরাত দিয়ে অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ জানান, টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরে ২২ ভাগ মানুষ নিতে চান, কয়েক মাস পর ২৭ ভাগ, এক বছর পর তিন ভাগ এবং ১৬ ভাগ কখনোই এই টিকা নিতে চান না।
টিকা দেরিতে নেওয়ার কারণ হিসেবে উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহে ৫৪ ভাগ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে ৩৪ ভাগ এবং টিকার মান নিয়ে ১২ ভাগ মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
আর্থিক সক্ষমতাও টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য তৈরি করেছে উল্লেখ করে গবেষণায় বলা হয়, যাদের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকা, তাদের মধ্যে থেকে বিনামূল্যে দিলে ৮৮ ভাগ এবং টিকা কিনে নিতে হলে ৫২ ভাগ টিকা নিতে রাজি।
যাদের আয় ২০,০০০-৫০,০০০ টাকা তাদের ৮৩ শতাংশ এই টিকা বিনামূল্যে নিতে চান, তবে ৮০ শতাংশই এই টিকার জন্য অর্থ দিতে রাজি আছেন। আর যাদের মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে, তাদের মধ্যে ৯১ শতাংশ টাকা দিয়ে টিকা নিতে চান।
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতাই টিকা নিতে আগ্রহী। যদিও শহরাঞ্চলে এর পরিমাণ ছিল ৮০ শতাংশ।
ধর্মীয় দিক দিয়ে বৌদ্ধরা সবচেয়ে কম আগ্রহী (৬৬ শতাংশ), মুসলমান (৮২ শতাংশ), হিন্দু (৯৭ শতাংশ), খ্রিষ্টান (১০০ শতাংশ) এবং নাস্তিকদের (১০০ শতাংশ) টিকা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই টিকা নিতে বেশি আগ্রহী।
গবেষণায় নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি এবং বরেণ্য ব্যক্তিদের টিকা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং এতে করে টিকা নেওয়ার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, টিকা নিয়ে থাকা গুজব রুখতে সরকারকে টিকা এবং সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
গবেষণা দলটির অন্যতম সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাফিউন শিমুল এবং ঢাবির স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা প্রমুখ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড-১৯ টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ গত সোমবার ঢাকা এসে পৌঁছেছে। এর আগে ভারতের উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এসব বিষয় মাথায় রেখে আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এ টিকার কার্যক্রম শুরু করবে সরকার।
দেশের হয়ে প্রথম করোনার টিকাটি নেবেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।