দেশে খাদ্য সংকট নেই, বিএনপির নেতারা কোরাস গেয়ে চলছেন : কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই। একটি মানুষও না খেয়ে নেই। অথচ বিএনপির একদল নেতা সারা দিন শুধু টেলিভিশনে ও পত্রপত্রিকায় খাদ্য সংকটের কোরাস গেয়ে চলেছেন, যা শুনলে মনে হয় দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে, মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। কিছু বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজও এ কোরাসের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে।’
মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও ঘিওর উপজেলায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২-এর বীজ উৎপাদনে মাঠ পরিদর্শনকালে কৃষকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপি ও সুশীল সমাজকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের দিকে ফিরে তাকানোর আহ্বান জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া, তারেক রহমানরা যখন ক্ষমতায় ছিল, প্রতিদিনই মানুষ না খেয়ে থেকেছে। প্রতি বছর মঙ্গায় শত শত মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। সে সময়ের পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা মেলে, খাদ্যের জন্য হাহাকার আর অনাহারে মৃত্যুর খবর। অন্যদিকে, গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগের আমলে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘চালের উৎপাদন বাড়াতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ৮৯ ও ব্রি ৯২ দ্রুত সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এ দুটি বোরো জাতের ধানের উৎপাদন প্রতি শতাংশে প্রায় এক মণ। এটিকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে চাই। সেজন্য এসব জাতের বীজ উৎপাদনের জন্য এবার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে জনপ্রিয় করতে প্রয়োজনে কৃষকদের আরও প্রণোদনা দেওয়া হবে।’
কৃষিজমি রক্ষায় সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘একদিকে, করোনা মহামারি রয়েছে, অন্যদিকে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আসছে না। এর মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশেই দুর্ভিক্ষের হাতছানি দেখা যাচ্ছে। সেজন্য কৃষি উৎপাদনে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে হবে। কাজেই কৃষিজমি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। কৃষিজমি রক্ষায় যে আইন হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সবাই মিলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিল্পায়নও করতে হবে, আবার কৃষিজমিও রক্ষা করতে হবে। এ দুটির মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর ধানবীজ উৎপাদনের জন্য মানিকগঞ্জের ১৬টি স্পটে এক হাজার ৪৪ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২-এর আবাদ হয়েছে। ৮১৪ জন কৃষক এ বীজ দিয়ে ধান চাষ করেছেন। কৃষকদের নানাভাবে প্রণোদনা ও পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার কেজি বীজ। সমলয়ের আদলে এক সঙ্গে ধান রোপণ করা হয়েছে। একই সময়ে হার্ভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটাও হবে।
মানিকগঞ্জের উপপরিচালক এনায়েত উল্লাহ জানান, তাঁদের হিসাবে (এক হাজার ৪৪ বিঘা জমি থেকে) এ বছর জেলায় প্রায় এক হাজার টন ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২ ধানবীজ উৎপাদন হবে, যা দিয়ে আগামী বছর ৪০ হাজার হেক্টর বা এক লাখ একর জমিতে ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২ চাষ করা যাবে। এবং তাতে ৫০ হাজার টন বাড়তি ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’
পরিদর্শনকালে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহা. আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।