দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরে আসবে : রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এত অন্যায়-অবিচার, এত রক্তপাতের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। এই দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরে আসবে।’
রুহুল কবির রিজভী আজ সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এক প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘চারদিকে অন্যায়, অবিচার ও গুম-খুন যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে, এটা চিরদিন চলতে পারে না, এর অবসান হবেই। এত অন্যায় অবিচার, এত রক্তপাতের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। এই দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। এই অপরাধীদেরও বিচার হবে। ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের অন্যায়-অবিচার ও গুম-খুনের বিরুদ্ধে যে ঝড় উঠেছে, এই ঝড়েই এই মাফিয়াতন্ত্র লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। যে ঝড় উঠেছে, এই ঝড়ের মধ্যে বালিতে মাথা গুঁজে রাখলে ঝড়ের প্রভাব কিন্তু কমবে না। এই ঝড়ে মাফিয়াতন্ত্র লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।’
রিজভী আরো বলেন, ‘সরকারের যে কুকীর্তিগুলো বেরিয়ে পড়েছে, সেগুলো ঢাকার জন্য তারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের আশ্রয় নিয়েছে। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা চায়, বিএনপি এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকুক তাহলে আমাদের কুকীর্তিগুলো যেগুলো দেশে-বিদেশে প্রচারিত হচ্ছে, এই বিষয়ে আর কেউ কথা বলবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আপনি কি চাপা দিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী? আপনি চাপা দিতে পারবেন না। যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা আজ জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে। বিটিআরসিকে দিয়ে আপনি আল জাজিরার রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এটা করে কোনো লাভ হবে না। কথা বললেই আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছেন। কম তো করেননি, আমাদের ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, রিমান্ডের নামে নির্যাতন করছেন, তার পরও জাতীয়তাবাদী শক্তির শেকড় এত গভীরে যে, এই শেকড় তুলে ফেলতে পারছেন না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘মাফিয়াতন্ত্র তারা এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে, যা-ই হোক তারা কোনো তোয়াক্কা করে না। আল জাজিরায় যারা রিপোর্ট করেছে, তারা বাংলাদেশে খায় না পরে? তারা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একটি দেশের ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে গিয়ে কী পরিমাণ অন্যায় হয়েছে, তার একটি রিপোর্ট করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কোনো দেনাপাওনা নেই যে তাঁরা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই রিপোর্ট করেছেন। তাঁরা যেটা করেছেন এটা হলো একটা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অংশ। আপনারা সেটাও সহ্য করতে পারলেন না। নানাভাবে কথা বলেও যখন এটাকে ধামাচাপা দিতে পারলেন না, তখন আপনাদের তৈরি করা আদালতের বিচারকদের দিয়ে সেই কাজটি করালেন। যে আদালত বলছে ইউটিউব ও ফেসবুকে আল জাজিরার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, এটা বন্ধ করে দিতে হবে। শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যেই বলেন গণতন্ত্রের কথা, এই হচ্ছে তাঁর গণতন্ত্রের নমুনা।’
‘বিএনপির মরা গাঙে আর জোয়ার আসবে না’— গতকাল দেওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘আওয়ী লীগের সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত সুরক্ষিত গৃহ থাকেন, যেখানে করোনাভাইরাস ঢুকবে না। সেই গৃহ থেকে তিনি বলছেন, বিএনপির মরা গাঙে আর জোয়ার আসবে না। মরা গাঙ তো আপনারাই তৈরি করেছেন। যাদের সঙ্গে আপনাদের রক্তের সম্পর্ক, তারাই তো বাংলাদেশের গাঙ, নদী-নালা পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আপনি ঠিকই বলেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেব, বিএনপির মরা গাঙে জোয়ার আসবে না। কারণ, মরা গাঙে এখন রক্তের স্রোত বয়, বিরোধীদলকে গুম খুন করে যে রক্ত ঝরিয়েছেন, সেই রক্তের স্রোত এখন শুকনো নদীতে প্রবাহিত হয়।’
রিজভী আরো বলেন, ‘আপনারা এখন প্রতিপক্ষ না পেয়ে নিজেরা নিজেরাই মারামারি করছেন, আপনার ছোট ভাইকে আপনি সামাল দিতে পারেন না। আপনার ছোট ভাই এখন বিবেকের তাড়নায় হোক অথবা পরিবারের মধ্যে লেনদেন নিয়ে কোনো ঘাটতির কারণে হোক, সত্য কথাগুলো বলে দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, নির্বাচন ফেয়ার হয়নি, দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এটা কাদের মির্জা বলছেন, যিনি আপনার ছোট ভাই। আমরা যে কথাগুলো প্রতিদিন বলছি, জনগণ যে কথাটি নিজের চোখে দেখেছে, সেই কথা এখন আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরাই বলছেন। তাঁদের এই ঝগড়াঝাটির মধ্যে নিরীহ সাংবাদিক মুজাক্কিরকে জীবন দিতে হলো। কাদের সাহেব আপনি তো প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। এর উত্তর আপনি কী দেবেন? আপনার ভাই এবং আওয়ামী লীগের এক নেতার মধ্যে সংঘর্ষের সময় নিরীহ সাংবাদিক নিহত হলো। এখন কোথায় মুখ লুকাবেন?’
খালেদা জিয়ার বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়া কিন্তু এখনো বন্দি। তার পরও নড়াইলের একটি আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রতিহিংসার আগুনের লেলিহান শিখা এতই, এটা যেন এই সরকার এবং সরকারপ্রধানের মন থেকে নেভেই না। যাঁকে কারাগার থেকে নিয়ে বাসায় বন্দি করে রাখা হয়েছে, তাঁর সব মানবিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। তার পরও নড়াইলের একটি আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এটা একটা পৈশাচিক সরকার ছাড়া কেউ করত না। হিটলার-মুসোলিনি-সাদ্দাম এঁরা এই কাজগুলোই করতেন। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যত ধরনের প্রথা-পদ্ধতি দরকার, তাঁরা প্রয়োগ করতেন। ঠিক একই কায়দায় এই অবৈধ সরকারও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তা করছে।’
আয়োজক সংগঠনের সদস্য এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডাক্তার দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক প্রমুখ বক্তব্য দেন।