দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ
মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আজ মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসকে টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ তিন আসামির আইনজীবী জেরা করছেন। গতকাল সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন শুধু বাদী শারমিন শাহরিয়া’র সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় এবং ১২ আসামির আইনজীবীরা তাঁকে জেরা করেন। পরে আদালতের কার্যক্রম মুলতুবি ঘোষণা করেন জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।
এদিকে, আজ সকাল ১০টার দিকে বরখাস্ত ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার শারমিন শাহরিয়া’র অসমাপ্ত জেরা সম্পন্ন করে অপর পাঁচ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। আগামীকাল ২৫ আগস্ট বুধবারও সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।
এর আগে গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ ছিল। মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে হাইকোর্টের নির্দেশে সারা দেশের মতো কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ওই তারিখে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতে পারেনি।
সরকার গত ১১ আগস্ট থেকে বিধিনিষেধ তুলে নিলে আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট নতুন করে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।
আদালতে দেওয়া চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মুহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত ও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপসহ নয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্বিতীয় এবং পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব-১৫।
হত্যাকাণ্ডের পর চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৮৩ জনকে সাক্ষী করে আলোচিত মামলাটির চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম।
মামলায় অভিযুক্ত ও কারাগারে আটক থাকা ১৫ আসামি হলেন—বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।