ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত : জবি ছাত্রীর বিচার শুরু
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাময়িক বহিষ্কৃত ছাত্রী তিথী সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর ফলে এ মামলায় তিথীর বিচার শুরু হলো।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন। বিষয়টি আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
পিপি বলেন, এ মামলায় তিথী সরকারের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলেও তিথি সরকারের স্বামী শিপলু মল্লিককে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
তিথী সরকারকে গত বছরের ১১ নভেম্বর বিকেল পৌনে ৪টায় নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সেদিনই দুপুর পৌনে ১২টায় তাঁর স্বামী শিপলু মল্লিককে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তিথী সরকারকে এক দিনের রিমান্ড দেন আদালত। তবে তাঁর স্বামী শিপলু মল্লিককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তিথী সরকার তাঁর ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্ট, কমেন্ট ও তথ্য শেয়ার করেন, যার ফলশ্রুতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমাবেশ করে।
এ সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ বিপদ এড়াতে এবং নিজেকে নিরাপদ রাখতে তার সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীর পরামর্শে তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হয়েছে মর্মে গত বছরের ২৩ অক্টোবর রাজধানীর পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় গত বছরের ২৬ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিথী সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদকের পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এর পরে সিআইডি তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানায়, গত ২৭ অক্টোবর তিথী সরকারের বড় বোন স্মৃতি রাণী সরকার পল্লবী থানায় তিথী সরকার নিখোঁজ সংক্রান্তে একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৫ অক্টোবর সকাল ৯টার পরে তিথী সরকার মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন।
এর পরই তদন্তে নামে পুলিশ। সাইবার পুলিশ সেন্টার তদন্ত করতে গিয়ে খবর পায়, তিথী সরকার স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে গ্রেপ্তার/অপহরণের নাটক সাজাচ্ছেন। তাঁর ধারণা ছিল, এভাবে আত্মগোপনে থেকে অপহরণের দায়ভার অন্যের ওপরে চাপিয়ে দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সংক্রান্ত ঘটনা থেকে তিনি রেহাই পাবেন এবং ঘটনাপ্রবাহ অন্যদিকে ধাবিত হবে।
পরবর্তী সময়ে আত্মগোপনে থাকা তিথী সরকারের অবস্থান শনাক্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের লক্ষ্যে সাইবার পুলিশের একটি বিশেষ টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও গোপন সোর্সের দেওয়া তথ্যানুযায়ী নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন দক্ষিণ শিলমান্ধি পাঁচদোনা এলাকা থেকে তিথী সরকারকে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তিথী সরকার জানান, গত ২৫ অক্টোবর মিরপুরের পল্লবীর বাসা থেকে বের হয়ে প্রেমিক শিপলু মল্লিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাগেরহাট যান। সেখানে শিপলু মল্লিককে বিয়ে করে বাগেরহাটে অবস্থান করে গত বছরের ৯ নভেম্বর ঢাকায় আসেন। পরে শিপলু মল্লিকের নরসিংদীর দূর সম্পর্কের চাচা দেবাশীষ রায়ের বাসায় অবস্থান করার সময়ে সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের দুটি টিম অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তিথী সরকারকে আটক করে। এর আগে ওই দিন দুপুরে ঢাকার গুলিস্তানের কাপ্তান বাজারের ইলেকট্রনিক মার্কেট থেকে শিপলু মল্লিককে আটক করা হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, নিরঞ্জন বড়াল তিথী সরকারকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট বিভ্রান্তিকর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো এবং তিথী সরকার নিজে থেকে আত্মগোপনে যাওয়া এবং তিথী সরকারের যাবতীয় কাজে শিপলু মল্লিকের সহযোগিতা করা পূর্বপরিকল্পিত এবং একই সূত্রে গাঁথা।