‘ধারদেনা করেও মাকে বাঁচাতে পারলাম না’
সাভারের আশুলিয়ায় রহিমা বেগম (৪৫) নামের এক নারীর ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই অস্ত্রোপচারের এক মাস পর মারা গেছেন রহিমা। আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় ভাড়াবাসায় আজ বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যান তিনি।
রহিমা বেগম বাগেরহাটের রেজাউল সিকদারের স্ত্রী। তিনি পরিবারসহ জামগড়ায় বসবাস করতেন।
অভিযোগ ওঠে, জরায়ুতে টিউমার হওয়ায় অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হন রহিমা বেগম। চিকিৎসক ভুল করে মুত্রথলি কেটে ফেলার পর থেকে ক্রমেই তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গত ২৭ এপ্রিল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ‘দি ল্যাব এইড’ নামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। পরে শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় ১৮ দিন পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা দাবি করেন, ওই নারীর ভুল চিকিৎসা করা হয়েছিল।
রহিমা বেগমের ছেলে সম্রাট বলেন, ‘জরায়ু সমস্যার কারণে চিকিৎসার জন্য মাকে আশুলিয়ার ছয়তলা এলাকার দি ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। বিভিন্ন পরীক্ষার পর মায়ের জরায়ুতে টিউমার ধরে পড়ে। আমরা সম্মতি দেওয়ার পর চিকিৎসকেরা মায়ের অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারের পর মায়ের অবস্থার আরও অবনতি হলে ওই হাসপাতাল থেকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকেরা। সেখানে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করেও মাকে সুস্থ করা যায়নি।’
সম্রাট বলেন, ‘এভাবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচের পর একপর্যায়ে চিকিৎসকেরা হাল ছেড়ে দেন। এর মধ্যে আমরা জানতে পারি, প্রথম দফায় অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া চিকিৎসক পালিয়ে গেছেন।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ করে সম্রাট বলেন, ‘মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে এবং ধারদেনার মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেও মাকে বাঁচাতে পারলাম না।’
চিকিৎসকেরা বলছেন, আগের অস্ত্রোপচারে ভুল করে রোগীর মুত্রথলি কেটে অনত্র লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে রোগীর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
এ ব্যাপারে দি ল্যাব এইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘রোগীর স্বজনদের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।’
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েমুল হুদা বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের ভুল চিকিৎসা এবং প্রতারণা ঠেকাতে দেশব্যাপী নিবন্ধনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এরই মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।