নওগাঁর পতিসর কাছারিবাড়িতে রবীন্দ্রজন্মোৎসব পালন
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আজ রোববার ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল সব অনুষ্ঠান। এবার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসর কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান হয়।
আবৃত্তি, গান, নাটক ও আলোচনা সভার আয়োজন ছাড়া কবিগুরুর স্মৃতিধন্য পতিসরে সকাল থেকে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের সমাগম ঘটে। সকাল ১০টায় পতিসর রবীন্দ্র কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ফেস্টুন ও কবুতর উড়িয়ে কবিগুরুর ১৬১তম জন্মোৎসবের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে কাছারিবাড়ি চত্বরে রাজশাহী চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘রং-তুলিতে রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার, সাংসদ মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া প্রমুখ।
পতিসরের দেবেন্দ্র মঞ্চে ‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক স্মারক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আশরাফুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি ড. পি এম শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের পরিচালক আলী রেজা আব্দুল মজিদ ও নওগাঁ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম।
এ সময় বক্তারা বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল। বাঙালি জীবনে নানা অনুষঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এখনো প্রাসঙ্গিক। বাঙালি জীবনের যত বৈচিত্র্য রয়েছে তার পুরোটায় উঠে এসেছে কবিগুরুর কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ ও উপন্যাসে। মানবতার সংকট থেকে উত্তরণে কবিগুরু তার লেখনিতে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র সাহিত্যচর্চা করলে মানবজীবনের নানা সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।
রবি ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে পতিসরে নামে রবীন্দ্রভক্তদের ঢল। পরিণত হয় মানুষের মহামিলন মেলায়। সরকারিভাবে একদিনের কর্মসূচি নিলেও এ মিলন মেলা চলে প্রায় সপ্তাহ জুড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে কবিভক্তরা ছুটে আসেন তাদের প্রিয় কবির পতিসর কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণে। একে অপরের সান্নিধ্যে এসে স্মৃতিচারণায় লিপ্ত হন কবিভক্তরা।
উল্লেখ্য, ১৮৩০ সালে বিশ্বকবির পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এ কালীগ্রাম পরগনা কিনে পারিবারিক জমিদারির অংশে অন্তর্ভুক্ত করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে প্রথম পদচারণ করেন ১৮৯১ সালের ১৬ জানুয়ারি। জমিদারি দেখাশোনার জন্য এলেও প্রকৃতি ও মানবপ্রেমী কবি অবহেলিত পতিসর এলাকার মানুষের জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাসহ অনেক জনহৈতিষী কাজ করেন। এখানকার কৃষকের কল্যাণে নোবেল পুরস্কারের এক লাখ আট হাজার টাকা দিয়ে তিনি একটি কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। কবির সাহিত্য সৃষ্টির একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে পতিসর। ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বারের মতো পতিসরে আসেন। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে পতিসর কুঠিবাড়ি।