নওগাঁয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষিকার সংবাদ সম্মেলন
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দয়ারাম সাহা ও সভাপতি আব্দুল মান্নান মুহরীর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার, অশালীন আচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা।
আজ রোববার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন করেন ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাইমা ইয়াসমিন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই শিক্ষিকা উল্লেখ করেন, তিনি প্রায় ১৮ বছর ধরে ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করে আসছেন। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে সাইমা ওই পদের জন্য আবেদনের ইচ্ছের কথা সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক দয়ারাম সাহা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান মুহুরী সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য তাঁর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। কিন্তু, তিনি তাঁদের কথা মতো টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাঁকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাইমা ইয়াসমিন দাবি করেন, গত বছরের ১৭ নভেম্বর সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বিল শিট ছিঁড়ে ফেলা ও অশালীন আচরণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তাঁকে শোকজ করে।
সাইমা আরও দাবি করেন, ওই শোকোজের যথাযথ জবাব দেওয়া সত্ত্বেও গত ৪ জানুয়ারি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাঁকা রেজুলেশনে তিনিসহ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের স্বাক্ষর নিয়ে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে এবং বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়।
শিক্ষিকা আরও দাবি করেন, বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে এবং বেতন আটকে রাখার অভিযোগে নিম্ন আদালতে মামলা করলে আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করার আদেশ দেন।
শিক্ষিকা জানান, তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারের পর থেকে বিদ্যালয়ে হাজির হয়ে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে প্রধান শিক্ষক তাঁকে বাধা দেন। তিনি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেন এবং তাঁরা তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দেন।
সাইমা জানান, পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ে নিয়মিত হাজির থাকা সত্ত্বেও ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুপস্থিত দেখিয়ে তাঁকে আবারও শোকজ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে লিখিত অভিযোগ করলে ডিজির নির্দেশে গত ১৭ জানুয়ারি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে আসেন।
ওই দিন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সামনেই প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতি তাঁকে (সাইমা) অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। বিষয়টি সরাসরি দেখে অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁকে ভিন্ন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের নির্দেশ দেন এবং বিদ্যালয়ে পাঠদানের ছবি তুলে রাখতে বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই শিক্ষিকা আরও জানান, গত ডিসেম্বর মাসে চাকরি করা সত্ত্বেও সাময়িক বরখাস্তের আগের তাঁর স্বাক্ষর ছাড়াই প্রধান শিক্ষক বেতন বিল জমা দেন এবং ওই মাসের কোনো বেতন তিনি পাননি। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর গত জানুয়ারি মাস থেকে তিনি আইন অনুযায়ী অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন।
এই অবস্থায় ওই শিক্ষিকা কোনো ধরনের বাধা-ভীতি ছাড়া বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন ও সমুদয় বেতন-ভাতার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রধান শিক্ষক দয়ারাম সাহা তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই শিক্ষিকা স্কুলে এসে সহকর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন এবং নিজের ইচ্ছেমতো চলেন। দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। তাঁর নানা অন্যায় আচরণের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে গত বছর নভেম্বর মাসে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সামনেই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন শিট ছিঁড়ে ফেলেন এবং আচরণের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা শো-কজের যথাযথ জবাব দিতে না পারায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’
প্রধান শিক্ষক দয়ারাম আরও বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে তিনি (সাইমা) এই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এরপর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি আইনিভাবে লড়াই করছে।’
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল মান্নান মুহুরী বলেন, ‘নিজের বহিষ্কারের আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ আনছেন। যেহেতু ওই শিক্ষিকা আদালতে মামলা করেছেন তাই তাঁকে তাঁর পদে পুনরায় ফেরত আনার বিষয়টি আর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারে নেই। এখন আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।’
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘এই ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান থাকায় কোনো মন্তব্য না করাই ভালো। আদালতের নির্দেশে ওই শিক্ষিকা বর্তমানে বিদ্যালয়ে পাঠদান করাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে আদালত যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’