নওগাঁ পৌরসভার মেয়র ও বিএনপিনেতা নজমুল হক সনির বিরুদ্ধে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই পৌরসভার এক কাউন্সিলর। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে নওগাঁ শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান সাগর এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আসাদুজ্জামান সাগর বলেন, ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর হিসেবে শপথ নেওয়ার কিছু দিন পর বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন পৌরসভার পয়ঃনিষ্কাশন লেবার সেকশন দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে পৌর মেয়র লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করছেন।

আসাদুজ্জামান সাগর লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, এই ঘটনার সত্যতা খুঁজতে গত ২০২১ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে পৌরসভায় মাসিক চুক্তি ভিত্তিতে ড্রেন লেবার হিসেবে কাজ করা শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরা তালিকা প্রাপ্তির জন্য পৌরসভার সচিবের কাছে আবেদন করেন। সেই তালিকা না পেয়ে পরবর্তী সময়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই তালিকা তাকে সরবরাহ করা হয়নি।

আসাদুজ্জামান সাগর লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, পরে বিকল্প উপায়ে পৌরসভার গত জুলাই ও আগস্ট মাসের ড্রেন লেবারের দৈনিক হাজিরা তালিকা সংগ্রহ করে জানতে পারেন, ওই দুই মাসে প্রতিদিন দৈনিক ১৫৭ জন শ্রমিক ড্রেন লেবার হিসেবে কাজ করেছেন। তালিকায় নাম থাকা ১৫৭ জনের মধ্যে ৫১ জন ভুয়া শ্রমিক। তালিকায় নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ওই সব শ্রমিকরা ওই দুই মাসে ড্রেন লেবার হিসেবে কাজ করেননি এবং মজুরির টাকাও উত্তোলন করেননি। যাঁদের মধ্যে আনিছুর নামে মৃত এক শ্রমিকের নাম রয়েছে। আনিছুর নামের ওই ব্যক্তি সদর উপজেলার চকতাতারু গ্রামের বাসিন্দা। ২০২০ সালের ৩ আগস্ট তিনি মারা গেছেন। দুই মাসে ওই ৫১ ভুয়া শ্রমিকের ১৫ লাখ ৬৬ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করা হয়েছে। 

লিখিত বক্তব্যে সাগর আরও বলেন, একাধিক মাসিক সভায় পৌরসভার কোন খাতে কত আয় এবং কোন খাতে কত ব্যয়, তিনি এ সংক্রান্ত তথ্য চাইলে মেয়র নজমুল হক সনি কোনো তথ্য দেননি। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে গত বছরের ৩১ অক্টোবর পৌরসভার মাসিক সভায় কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান সাগর বিবিধ আলোচনা সূচিতে নওগাঁ পৌরসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের দাবি জানালে মেয়র তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং রেজ্যুলেশন খাতা ছুঁড়ে ফেলে দেন।

আসাদুজ্জামান সাগর লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, মেয়রের বিরুদ্ধে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনার বিচার চেয়ে নওগাঁ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি)সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখায় গত ২১ মার্চ লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল সোমবার দুপুরে পৌরসভা কার্যালয়ে অভিযোগের তদন্তে আসেন নওগাঁর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক উত্তম কুমার রায়। তদন্ত চলাকালে জাকির আলী নামে তাঁর একজন সাক্ষীকে মারধর করে মেয়রের লোকজন। তিনি বর্তমানে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে গতকাল সকালে মেয়র লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দেন। অভিযোগ তুলে নিতে অস্বীকার করলে মেয়র তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ পৌরসভার মেয়র ও নওগাঁ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক সনি বলেন, ‘কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান সাগর একজন অ্যাডিক্টেড। তিনি সম্পূর্ণ আবোল-তাবোল বকছেন। একজনও ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে টাকা আত্মসাত করা হয়নি। একটি চক্রের ইন্ধনে আমাকে হেয় করার জন্য কাউন্সিলর সাগর এই ধরনের অভিযোগ করছেন।’

অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি-ধমকির দাবি অস্বীকার করে মেয়র বলেন, ‘এটা সত্য নয়। তাঁকে কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক উত্তম কুমার রায় বলেন, নওগাঁ পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।