নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় চলছে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নওগাঁ পৌরসভা এলাকা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন চলছে আজ বৃহস্পতিবার। বিভিন্ন স্থানে চলছে পুলিশি তৎপরতা। সকাল থেকেই শহরে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। অসংখ্য মানুষকে হেঁটেই চলাচল করতে দেখা যায়। তবে এর মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে ছোটখাট বাজারগুলোতে মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।
আজ সকালে নওগাঁ পৌর বাজার এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম চোখে পড়ে। শহরের মুক্তির মোড়, বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড মোড়, তাজের মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে তল্লাশি চৌকিতে অবস্থান নিতে দেখা গেছে পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত দলকে। রাস্তায় যানবাহন খুব চলতে দেখা যায়নি। অসংখ্য মানুষকে হেঁটেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
সকাল ৯টার দিকে শহরের বিহারি কলোনি বাজার দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করেই চলছে বাজারঘাট। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক ছিল না। দুই-একজন ছাড়া অধিকাংশ মানুষের মাস্ক থুতনিতে কিংবা পকেটে রাখতে দেখা গেছে। এ সময় বাজার করতে আসা পৌরসভার স্লুইস গেট এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন আমাদের ভালোর জন্যই লকডাউন দিয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ সচেতন না হলে লকডাউন কার্যকর সহজ নয়। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতির কারণে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে কিছুটা লকডাউন কার্যকর হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার মোড় ও ছোটখাট বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি আগের মতোই লঙ্ঘন হচ্ছে। এর জন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পাশাপাশি মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’
শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তির মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চৌকির কাছে গিয়ে মোটরসাইকেলের অনেক চালককে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে দেখা যায়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে অনেক চালককেই জরিমানা করেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
শহরের প্রধান বাজার এলাকার বাটার মোড়, রুবির মোড় ও গোস্তহাটির মোড় এলাকায় জরুরি পণ্য ছাড়া প্রায় সব দোকানই বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এসব এলাকার রাস্তাঘাটে অন্য দিনগুলোতে সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত মানুষ গমগম করলেও আজ সকাল থেকে ছিল প্রায় জনশূন্য।
বেলা ১১টার দিকে শহরের পৌর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্য দিনের তুলনায় বাজারে মানুষের উপস্থিতি খুব কম ছিল। সেখানে কথা হলো খুচরা বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন ও বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, আগে বাজার ক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করত। কিন্তু আজ বাজারে মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চললে।
নওগাঁয় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরসভা এলাকায় গতকাল বুধবার দুপুরে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায়ও সর্বাত্মক লকডাউন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী সাতদিন এই বিশেষ লকডাউন বলবৎ থাকবে। ১৫টি বিধি-নিষেধ আরোপ করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুরে নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হারুণ-অর রশিদ প্রেস ব্রিফিংয়ে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের এই ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক হারুণ অর রশিদ জানান, সম্প্রতি নওগাঁর নিয়ামতপুর ও সদর উপজেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা সুপারিশের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক জরুরি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সদর উপজেলার পৌরসভা এলাকা সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে নিয়ামতপুর উপজেলাকেও সর্বাত্মক লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, লকডাউন ঘোষিত এলাকায় সব ধরনের জরুরি পরিষেবা ও পণ্যবাহী পরিবহণ চালু থাকবে। লকডাউনে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাসসহ দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন, দোকানপাট বন্ধ থাকবে।