নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় আরও একজন গ্রেপ্তার
নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনার অন্যতম আসামি রহমতুল্লাহ বিশ্বাস রনিকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা দেওয়াসহ শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানো এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মুরসালিন বাদী হয়ে ১৭০ জনকে আসামি করে গত সোমবার দুপুরে মামলা করেন।
এরই মধ্যে আড়পাড়া গ্রামের মির্জাপুর বাজারের মোবাইল ফোন মেরামতকারী শাওন (২৮), মির্জাপুর গ্রামের অটোচালক রিমন (২২) এবং একই গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মনিরুল ইসলামকে (২৭) গত মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে পুলিশ ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের আটক করতে তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ঘটনার অন্যতম আসামি রহমত উল্লাহ রনির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশ খুলনা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় রনি তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় পালিয়ে ছিলেন।
পুলিশ আরও জানায়, আজ বৃহস্পতিবার রনিকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার বাকি তিন জনকে গত মঙ্গলবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার ওই তিন জনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আগামী রোববার শুনানির দিন ধার্য করা হয়।
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মুখপাত্র নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন, “প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম।” এ পোস্ট দেওয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে যান রাহুল। এরপর তাঁর বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও তিনি তা করেননি।
শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানায়। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটাসহ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হয়।
এদিকে, রাহুল দেব রায়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।