নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনা : চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড
নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় চার আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চার আসামি হলেন—রহমত উল্লাহ রনি, শাওন খান, রিমন ও মনিরুল ইসলাম। তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান। এ মামলায় ১৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সদস্যেরা।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া সদস্যেরা হলেন—জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির। এ তদন্ত প্রতিবেদন কত পৃষ্ঠার, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে চাননি কমিটির সদস্যেরা।
অপরদিকে, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্তের কাজ প্রায় সম্পন্ন বলে জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মুখপাত্র নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন, “প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম।” এ পোস্ট দেওয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে যান রাহুল। এরপর তাঁর বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও তিনি তা করেননি।
শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানায়। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের সব শিক্ষকদের পরামর্শে রাহুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিপেটাসহ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হয়।
এদিকে, রাহুল দেব রায়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন ঘটনার দিন ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।