নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষার ভোট আজ কুমিল্লায়
আজ বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ভোটগ্রহণ। বহুল প্রত্যাশিত এ ভোট কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রথম পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় কমিশন কীভাবে উৎরাবে, তা এখন দেখার বিষয়।
কুমিল্লা সিটির এ ভোটকে কেন্দ্র করে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বেশ কঠোর মনোভাব পোষণ করতেও দেখা গেছে ইসিকে। এটিকে ইসির সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের বড় সুযোগ বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। ফলে, ইসির জন্য এ নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ।
যদিও স্থানীয় সংসদ সসদ্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচনি এলাকা ছাড়তে বলার পরও তিনি এলাকা ছাড়েননি। বাহারের এলাকা ছাড়া নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে ইসিকে। বাহার ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, বাহারই ইসির প্রথম ধাক্কা।
আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সকাল এ ভোটগ্রহণ করা হবে। এ ভোটকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ভোট সুষ্ঠু করতে ইসিও তৎপর। কুমিল্লার ভোটে সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা।
এদিকে কুমিল্লা সিটির ভোট নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সদ্য সাবেক মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল ইসলাম সাক্কুর হ্যাটট্রিক বিজয় না কি প্রথমবার জয়ের মুকুট আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের নিশ্চিত হবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বুধবার রাতে ভোটের ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত।
কুমিল্লা সিটির ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সুষ্ঠু ভোট করতে কমিশন বদ্ধপরিকর। যেকোনো অনিয়মকে প্রতিহত করা হবে। কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতে চাইলে কঠোর অবস্থানে যাবে ইসি। গ্রহণ করা হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হবে। আমরা আশাবাদী কুমিল্লায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হবে।
সে সময় এ ভোটের ব্যাপারে সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন মো. আহসান হাবিব খান।
এদিকে কুমিল্লা সিটির ভোটের সাথে আজ ৫টি পৌরসভা, ৪টি উপজেলা পরিষদ এবং দেড়শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদের ভোটও অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান। এবারের কুমিল্লায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্র দখল কিংবা পেশি শক্তির ব্যবহারসহ কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বা সহিংসতা যাতে ঘটতে না পারে সেজন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ সহস্রাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো সিটিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ট্রাকে করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ইভিএমসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম।
১৪৪০ সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করবে ইসি
ইসি সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক), পাঁচটি (গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর ও গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, সিলেটের বিয়ানীবাজার এবং মেহেরপুর পৌরসভা) পৌরসভা ও ১৩২টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কুসিক ও পাঁচ পৌরসভার ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকক্ষের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য ১ হাজার ৪৪০টি সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসির যুগ্মসচিব ও পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে এসব নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরাসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী মালামাল সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছে গেছে। ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
ইসির আইডিয়া প্রকল্প-২ এর ডিপিডি কমিউনিকেশন অফিসার স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে ৮৫০টি সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি পৌরসভায় রয়েছে ৫৯০টি সিসি ক্যামেরা। কুসিক ও পাঁচ পৌরসভায় মোট ১ হাজার ৪৪০টি সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করছে কমিশন।
ইসি জানায়, কুমিল্লা সিটি, পাঁচটি পৌরসভা ও ১২৫টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর সাতটি ইউপিতে প্রচলিত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া একই দিনে বগুড়ার গাবতলী পৌরসভার ৯ নং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচন; একটি উপজেলা পরিষদে সাধারণ ও তিনটিতে বিভিন্ন শূন্য পদের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এবার কুমিল্লা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন ৫ জন। মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন- কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা), টানা দুইবারের সদ্য সাবেক মেয়র ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। এদের মধ্যে প্রথম তিন প্রার্থী বেশ আলোচিত। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ১০৮ জন প্রার্থী।
এখনো পর্যন্ত কোন নির্বাচনে হারেননি মনিরুল হক সাক্কু। হ্যাটট্রিক বিজয়ের প্রত্যাশা করছেন তিনি। ২০০৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। এরপর ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি মেয়র হিসেবে বিজয়ী হন। এবার তিনি স্বতন্ত্রভাবে সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হন। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মনিরুল হক সাক্কু।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবারই প্রথমবারের এমন পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১৯৮১ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের বহিঃক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন। তিনি কুমিল্লা ক্লাবে সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করে একাধিকবার জয়ী হন। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি তার প্রথম নির্বাচন। রিফাত বলেন, ‘প্রথমবার নির্বাচন করছি। জনগণ আমার পক্ষে রায় দেবেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
তৃতীয়বারের মতো এবার হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট। ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। হিজড়া ভোটার দুজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। ভোটকেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮৯টি অতিঝুঁকিপূর্ণ, ৯টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নগরীর ১০৫টি কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সোমবার থেকে নগরীতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪ হাজার ২৬০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৯টি টিমে পুলিশ সদস্য ২ হাজার ৪৬০ জন, ১২ প্লাটুন বিজিবির ২৪০ জন সদস্য, র্যাবের ৩০টি টিমে ২৫০ জন, ১০৫ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৬০ জন আনসার, এপিবিএন এর ৯টি গ্রুপে ৫০ সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। এছাড়া নগরীর প্রবেশপথে থাকবে ৭৫টি চেকপোস্ট। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠ তদারকিতে নিয়োজিত থাকবেন ৬ জন এডিসি ও ডিডিএলজি। ভোটের দিন কিংবা এর আগে-পরে সন্ত্রাসীরা যাতে কোনো ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৯০ জন ও সদর দক্ষিণের ২০ জনসহ ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে পলিটিক্যাল ক্যাডার, অস্ত্রধারীসহ নানান অপরাধে অভিযুক্তরা এ তালিকায় রয়েছেন।