নবগঠিত ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যের ক্ষোভ, একাংশের সংবাদ সম্মেলন
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হোসেনপুর উপজেলার নবগঠিত ছাত্রলীগের কমিটির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা ছাত্রলীগের একটি অংশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অছাত্র, বিবাহিত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এতে ‘টাকার বিনিময়’ হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষুব্ধরা ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এর আগে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নতুন এই কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নবগঠিত হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেক মিয়া।
এ সময় নবগঠিত কমিটির সহসভাপতি মোখলেছুর রহমান, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন মোল্লা মঈন, সাবেক সদস্য আমির হামজা, হোসেনপুর কলেজ ছাত্রলীগনেতা মনিরুল ইসলাম মাছুম উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার মুস্তাফিজুর রহমান মোখলেছকে সভাপতি ও ইয়াছিন আরাফাত শুভকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খান আংশিক এ কমিটি অনুমোদন দেন। কমিটিতে নয়জন করে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাখা হয়েছে।
এ কমিটি নিয়ে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের (সদর-হোসেনপুর) সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি তাঁর ফেসবুক আইডিতে ক্ষোভ প্রকাশ এবং নেতাকর্মীদের নিয়ে বক্তব্য দেন, যা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সংসদ সদস্য গতকাল দিনগত রাত ১টা ১৪ মিনিটে ফেসবুকে প্রথম পোস্ট দিয়ে সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কি এই ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম? যারা কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না। কীসের লোভে। এখন জানার সময় হয়েছে।’
ওই পোস্টে সংসদ সদস্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ করে লেখেন, ‘তোমরা দুজনে আমাকে কথা দিয়েছিলে, সদর ও হোসেনপুরের কমিটি আমার মতো করে দেবে। এ ছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও আমাকে অনুরূপ কথাই দিয়েছিল। আমার নির্বাচনী এলাকাধীন কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি আমার কনসার্ন নিয়ে যেন হয়, সে বিষয়ে সতর্ক খেয়াল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিও।’
প্রথম পোস্টের সাত মিনিট পর রাত ১টা ২১ মিনিটে ফেসবুকে দ্বিতীয় পোস্টে সংসদ সদস্য লিপি ঘোষিত কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অছাত্র, বিবাহিত, বয়স উত্তীর্ণ ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বারবার বলার পরও কেন বা কী কারণে সমন্বয় না করেই মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা কমিটি কর্তৃক এমন একটি বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করা হলো? আমরা কি এমন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চেয়েছিলাম?’
সংসদ সদস্য আরও লিখেন, ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ ও বিতর্কিত কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ও নবগঠিত হোসেনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
সংসদ সদস্যের দুটি পোস্টের পর থেকে ফেসবুকে নতুন কমিটির পক্ষে ও বিপক্ষে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
নবগঠিত কমিটির বিষয়ে কথা বলতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খানের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত কিশোরগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের তিন সদস্যের কমিটি এক বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমনকে সভাপতি, মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খানকে সাধারণ সম্পাদক এবং লুৎফর রহমান নয়নকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। তিন সদস্যের কমিটির বয়স তিন বছর হতে চলছে। কিন্তু, এখন পর্যন্ত তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি।