নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ
দেশের ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। তিনি পূর্বতন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ শিখা অনির্বাণে পুস্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। সেখানে সেনাপ্রধান একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
এর আগে সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান নবনিযুক্ত সেনাবাহিনী প্রধানকে ‘জেনারেল’ র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন।
আগামী তিন বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন জেনারেল শফিউদ্দিন। নতুন দায়িত্ব পাওয়ায় জেনারেল শফিউদ্দিনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এর আগে গত ১০ জুন সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ওয়াহিদা সুলতানা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে ২৪ জুন (২০২১) বিকেল থেকে জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদানপূর্বক প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো।’
নতুন সেনাপ্রধানের জীবন-বৃত্তান্ত : আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা-পূর্বকালে একনাগারে দুই যুগ জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে নবম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পরবর্তী তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন এলাকায় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদানপূর্বক তাঁর সামরিক কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ইন ডিফেন্স স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজে প্রথম বিভাগে অসামান্য ফলাফলসহ এমফিল সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপির অধীনে পিএইচডি সম্পন্নের উদ্দেশ্যে অধ্যয়নরত আছেন। জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ প্রথম স্থান অধিকার এবং এমআইএসটি গোল্ড মেডেল অর্জনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ২০১০ সালে সফলতার সঙ্গে চীনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি (এনডিইউ) থেকে ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ কোর্স এবং মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে আর্মি স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি তিনি এনডিইউ, ওয়াশিংটন থেকেও গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।
বর্ণাঢ্য চাকরি জীবনে এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একমাত্র লজিস্টিকস ফরমেশন এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন। এ ছাড়াও তিনি একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশন এলাকায় একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে কমান্ড নিযুক্তিতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (বিআইআইএস) মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন পাইওনিয়ার ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে ২০১৪-২০১৬ পর্যন্ত ইউনাইটেড ন্যাশনস মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন দ্যা সেন্ট্রাল আফ্রিকাতে (মিনুস্কা) বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং অসামান্য কর্মদক্ষতা প্রদর্শনের জন্য এসআরএসজি কর্তৃক সাইটেশন প্রাপ্ত হন। তিনি বিভিন্ন ফরমেশন সদর দপ্তরে সিনিয়র অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক স্টাফ অফিসারসহ সিনিয়র ডাইরেক্টিং স্টাফ হিসেবে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যাডেট কলেজ ও প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (আর্টডক) চিফ অব ডকট্রিন ডিভিশন এবং সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে সামরিক প্রশিক্ষণ পরিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে শফিউদ্দিন আহমেদ সেনাসদরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত বাবা।