নরসিংদীতে শিক্ষার্থীদের পেটানোয় কলেজের অধ্যক্ষ গ্রেপ্তার
নরসিংদীর পলাশে ১৬ শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগে সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার পণ্ডিতপাড়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে কলেজের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাইপ দিয়ে পেটানোর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ছাত্রদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ নানা অনিয়মের কারণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড গত বছর কলেজটির উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ফরমফিলাপ করার ক্ষমতা স্থগিত করেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগে ৬টি বিষয়ে পাঠদান হয়। গতকাল রোববার ৬ষ্ঠ ক্লাসের শিক্ষক পাঠদান করবে না এমন খবরে ক্লাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। তবে শিক্ষক ক্লাসে এলে কয়েকজন এসে পাঠদানে যুক্ত হয়।
আজ সোমবার যথারীতি সকল শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হয়ে পাঠগ্রহণ শুরু করে। বেলা ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ নিয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে ৬ষ্ঠ ক্লাস না করা শিক্ষার্থীদের দাঁড় করান। একে একে শাকিব, সিজান, আদনান, সোহেল, সিফাত, নয়ন, তাহসিন, আশরাফুল, আমিরুল, তাসফিকসহ ১৬ শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আবার অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহতের ছবি পোস্ট করে অধ্যক্ষের বিচার দাবি করেন। যা অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে যায়।
স্বাধীনূর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, শিক্ষকরা গুরুজন, বাবা-মার মতো। সেখানে কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে এইভাবে মারছে। আমার বাবা-মা তথা কেউই কোনোদিন এভাবে মারেনি। আমি আজ সারাটা ক্লাস শুধু ভাবছি, কি হলো আমার সাথে! শুধু আমার সাথে যে তাই না। ক্লাসের অধিকাংশই আজ এই আঘাতের শিকার হয়েছে।
আরেক আহত শিক্ষার্থী সোহেল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষ স্যার ক্লাসে তিনটি অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ ও পানি নিয়ে গিয়েছে। আমাদের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হলে সেই পানি খেয়ে আবার পিটিয়েছে। আমরা শিক্ষকের কাছ থেকে এই ধরনের আচরণ আশা করিনি।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নরসিংদীর পলাশ থানার সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের শাসন করেছি। এখন কেউ কেউ এটাকে ইস্যু বানিয়ে পরিবেশ ঘোলা করার চেষ্টা করছে।
ছাত্র পেটানোর ঘটনা সম্পর্কে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম মিত্রের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি তাঁর জানা নেই জানিয়ে বলেন, ছাত্র পেটানো কেন কোন শিক্ষক ছাত্রকে তিরষ্কার করে কথা বলার বিধানও আইনে নেই। ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিলনকৃষ্ণ হালদারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস মিয়া বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজীকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।