নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ৮ বছর : দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন ঘটনার আজ আট বছর। দীর্ঘ এ সময়ে আদালতের রায় সাড়ে তিন বছর ধরে ঝুলে আছে আপিলে। এদিকে, রায় কার্যকরে ধীরগতি নিহতের পরিবারে বাড়াচ্ছে ভয়, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক বলে দাবি স্বজনদের। আপিলে বিভাগে রায় বহাল রেখে অবিলম্বে তা কার্যকরের দাবি করেছেন স্বজনেরাসহ মহানগরীর সাধারণ মানুষ।
সাত খুন মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। পরে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট হাইকোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। তারপর সেটির আপিল করে আসামিপক্ষ। এরপর সাড়ে তিন বছর কেটে গেছে।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে এক মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে সাত জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদি হয়ে ফতুল্লা থানায় দুটি মামলা করেন।
পরে আসামিদের স্বীকারোক্তি, জবানবন্দি ও স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ৩৩ মাস পর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারিতে রায় দেন। ওই রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাত জনকে ১০ বছর করে এবং দুজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সে রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট হাইকোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন। আর, বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারের পরিবারের আপিল আদালতে রায় বহাল রাখার দাবি করেন। একই সঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকর করার কথা বলেন তাঁরা।
‘উচ্চ আদালতে রায় বিষয়ে ধীরগতির কারণে’ এখনও ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটছে বলে জানান মামলার বাদি ও নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। তিনি দ্রুত রায় বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘আমরা বিচার নিয়ে আশঙ্কায় আছি। কতো মামলার বিচার হচ্ছে, কিন্তু আমাদের করা মামলার রায় এসেছে ঠিকই, কিন্তু কার্যকর হয়নি।’
‘শত্রুপক্ষ শক্তিশালী’ উল্লেখ করে বিচারের রায় কার্যকরে নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, ‘সাতটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে, সাতটি পরিবারের যে হাহাকার তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপলব্ধি করতে পারেন। তিনি এমনই ব্যথায় ব্যথিত। এমন একটি অবস্থায় বাবাহারা সন্তানদের মানুষ করা কতোটা কঠিন, তিনি তা জানেন।’
আপিল আদালতেও হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন সাত খুন মালার আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীসহ সচেতন নাগরিকরা। তাঁরা দ্রুত ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এ রায় কার্যকর হলে দৃষ্টান্ত ও যুগান্তকারী হয়ে থাকবে।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শুধু নারায়ণগঞ্জ নাগরিক সমাজই নয়, সাত খুন মামলার সুষ্ঠু বিচারের রায় কার্যকরের দাবি সারা দেশবাসীর। রায়ের আগে এটি নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে, আন্দোলন ও হরতাল হয়েছে। এখন সাবাই রায় কার্যকরের দিকে তাকিয়ে আছেন।’