নারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ঢাবির ৮ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১
এক নারীকে শ্লীলতাহানি, তাঁর স্বামীকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে তুষার নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) গ্রেপ্তার তুষারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ।
গত মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুই শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ছয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এ মামলা করেন এক নারী।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রাহুল রায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তুষার ও এদের আরও পাঁচ থেকে ছয়জন অজ্ঞাতসঙ্গী।
অভিযুক্ত রাহুল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সাবেক সদস্য। এর আগে তিনি ঢাবির আইন অনুষদ ছাত্রলীগের উপঅর্থবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আর তুষার ঢাবির জসিম উদ্দিন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী।
এদিকে ঘটনার ভুক্তভোগী নারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ঘটনায় জড়িত সবাইকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে দাবি করে ভুক্তভোগী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দিনটা ছিল রোববার। ওইদিন ঢাকা মেডিকেলে আমার কাজ ছিল। কাজ শেষ করে হাজব্যান্ডকে আমাকে নিয়ে যেতে বলি। এজন্য তিনি বাইক নিয়ে আসে। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাইক নিয়ে শিখা চিরন্তনের পাশে গেলে একজন একটি বাজে টিউন করে এবং আমাকে টাচ করার মতো একটা অঙ্গভঙ্গি করে। আমাদের বাইকটা ব্রেক করা হয়। এ সময় আমাদের মামলার প্রধান আসামি রাহুল, গালি দিতে দিতে আমার দিকে তেড়ে আসে এবং বলতে থাকে যে, ওকে ধর। তখন ধাক্কাধাক্কি হয়। এক পর্যায়ে, মৌমাছির মতো তাদের আরেক দল আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর আমার হাজব্যান্ডকে মারতে মারতে পেছনের সাইডে নিয়ে যায়। এরপর আমি তাদের ফেরাতে যাই এবং তাদের না মারার জন্য রিকোয়েস্ট করি। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে আবার আমার ওপর আক্রমণ করে। আমাদের দুজনকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করে। একপর্যায়ে, আমি শাহবাগ থানার দিকে যাই এবং তারা আমাকে ধাওয়া দেয়। এরপর থানা থেকে পুলিশ নিয়ে এসে আমার হাজব্যান্ডের ফোন ও বাইকটা ওদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়।’
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে জগন্নাথ হলের রাহুল ও জসিম উদ্দিন হলের তুষারকে চিহ্নিত করা হয়। এদের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনের নামে মামলা করা হয়। ইতোমধ্যে তুষারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মাধ্যমেই বাকিদের বের করা যাবে। এ ঘটনার পর আমি আসলে আমার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাবোধ করছি।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রাহুলের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘রাহুল সদ্য সাবেক ছাত্রলীগকর্মী। তার সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে ছাত্রলীগ কখনোই তার দায় নেবে না।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা তুষারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘যদি কেউ অপরাধ করে, তার অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হবে। সে ছাত্রলীগকর্মীই হোক আর যাই হোক। এটা শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। এখানে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। এছাড়া, অপরাধের নামে অন্যায়ভাবে কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়া এবং প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা, এটাও কিন্তু ঠিক না। আগে আইনের মাধ্যমে প্রমাণ হোক। তারপর আইন অনুযায়ী বিচার হবে।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওই ঘটনার মামলায় তুষার নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে।’