প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের চতুর্থ বর্ষপূর্তি ও পঞ্চম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আজ শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৬ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ অর্থবছরে আমরা কোথায় ছিলাম, আর এখন আমাদের অবস্থান কোথায়?’ তিরি বলেন, ‘জোট সরকারের শেষ অর্থবছর ২০০৫-৬-এ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৫-৬ সময়ে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক পাঁচ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্রের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল পাঁচ দশমিক ৪০ শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল আট দশমিক ১৫ শতাংশে। ২০০৫-৬-এ জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৬০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের শেষ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে আয় হয়েছিল ১০ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২০২২ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। ২০০৫-৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল চার দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ২২ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে, যা পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভ রয়েছে।’ 

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘২০০৫-৬ সময়ে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২২ জনে। গড় আয়ু সাড়ে ৬৪ বছর থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ দশমিক দুই শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ‌্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৭১ শতাংশ, তা হয়েছে ৯৯ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ২০০৫-৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।’

শেখ হাসিনা, ‘২০০৫-৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে ভতুর্কি দেওয়া হয় ৫৯২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছর কৃষি খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০০৫-৬ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছিল এক কোটি ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টো চার কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামাত জোটের শেষ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠির হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়েছি। সব ঘর আলোকিত করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।’