নিউমার্কেট এলাকা ফের উত্তপ্ত, চলছে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া
রাজধানীর নিউমার্কেট ও তার আশপাশের ব্যবসায়ী এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফের পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়েছে। চলছে ইটপাটকেল নিক্ষেপ। গতকাল সোমবার দিনগত রাতে সংঘর্ষ আড়াই ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসলেও সকাল পৌনে ১১টার দিকে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা।
রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আবুল হাসান আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। ঢাকা কলেজের মূল ফটকের ভেতরে থাকা ছাত্রদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছেন ব্যবসায়ীরা। পাল্টা হামলা করছেন শিক্ষার্থীরাও।
এসি আবুল হাসান বলেন, ‘গতকাল রাতে নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষে আমি নিজেই আহত হই। যখন ইট-পাটকেল ছোড়া হয়, তখন আমার শরীরে এসে লাগে। আমি এখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। সংঘর্ষের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল হাসান বলেন, ‘আমি শুনেছি, একটি পাঞ্জাবি কেনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। দোকানদার পাঞ্জাবির দাম এক হাজার ২০০ টাকা চাইলে শিক্ষার্থীরা ২০০ টাকা দিতে চান। এ নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রাথমিকভাবে আমি এটি জানতে পেরেছি। বিস্তারিত তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে।’
এদিকে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি করেছে। কিন্তু, এ অভিযোগ অস্বীকার করছে পুলিশ। এসব বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো গুলিবর্ষণ করিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছি। আমাদের সাত থেকে আট জন সদস্য আহত হয়েছেন।’
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘তিন জন শিক্ষার্থী নিউমার্কেটের একটি দোকানে কেনাকাটা করতে যান। দাম নিয়ে দোকানির সঙ্গে তাঁদের বাকবিতণ্ডা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দোকানদার ও তাঁর লোকজন তাঁদের মারধর করেন। পরে শিক্ষার্থীরা হলে গিয়ে বিষয়টি জানায়। হলের শিক্ষার্থীরা একযোগে নিউমার্কেটের গেট ভেঙে ওই দোকানদারকে মারতে যান। খবর পেয়ে আমরা তাঁদের বাধা দেই এবং চলে যেতে বলি।’
সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের কথা শুনে শিক্ষার্থীরা পিছু হটলেও দোকানিরা সড়কে চলে আসেন। এরপর দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আমরা শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি এবং দুপক্ষকে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করি। এরপর শিক্ষার্থীরা আবার সড়কে অবস্থান নেন। পরে তাঁদের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। শিক্ষার্থীরা দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে যার যার হলে চলে যান।’
এদিকে, রাত আড়াইটার দিকে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয় বলে দাবি করেছেন কয়েক শিক্ষার্থী। তাঁরা আহতদের নাম জানান—মোশাররফ হাজারি (২৪) ও রজব ইসলাম (২৭)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পুলিশের রাবার বুলেটে মোশারফ হোসেন আহত হন। অন্যদিকে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল এসে লাগে রজবের বুকে।’
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষে আহত দুই শিক্ষার্থীর চিকিৎসা জরুরি বিভাগে চলছে।’ দুই ব্যবসায়ীর চিকিৎসাও একই হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেটের মধ্যবর্তী সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে রেখেছে। পুরো রাস্তাজুড়ে ইটের টুকরা ও কাঁচ ভাঙা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। ওই সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
সংঘর্ষের সময় রাস্তার দুই পাশে রাখা একাধিক মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো জ্বলতে দেখা যায়। তবে, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগকারীদের বিষয়ে জানা যায়নি।
সংঘর্ষে একাধিক পুলিশের সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ। তবে প্রাথমিকভাবে কতজন আহত হয়েছেন, তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। নিরাপদ অবস্থানে থেকে তাঁদেরকে নিবৃত্ত করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলা হবে কি না, জানতে চাইলে এডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং ঘটনার সূত্রপাত বিশ্লেষণের পর মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও কিছু যানবাহন ও কয়েকটি দোকানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি হলে এবং তাঁরা যদি অভিযোগ করেন অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’