নিচু জমি ভরাটে উজার হচ্ছে পাহাড়
বান্দরবানে রাস্তা নির্মাণের নামে কাটা হচ্ছে পাহাড়। পাশের নিচু জমি ভরাটের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে পরিবেশ। এলাকার প্রভাবশালীরা এর সঙ্গে জড়িত বলে রয়েছে অভিযোগ। এসব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এস্কেভেটর। চোখ রাঙানিতে মুখ খুলতে সাহস পান না এলাকাবাসী। তাঁদের রয়েছে প্রাণের সংশয়। প্রকাশ্যে পাহাড় কাটতে দেখেও দেখে না পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসন বলে অভিযোগ তাঁদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের রামজাদী এলাকায় কয়েকটি এস্কেভেটর ব্যবহার করে প্রকাশ্যে বিশাল একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণের নামে এরই মধ্যে পাহাড়টি কয়েক দফায় কেটে মধ্যখানে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে।
জানা গেছে, রামজাদী এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করতে ফসলি নিচু জমি ভরাটের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে।
কাজটির তদারকির দায়িত্বে থাকা টিটু বড়ুয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। কিন্তু, পাহাড় কাটা মাটিগুলো পাশের এলাকায় জমি ভরাটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রথম দফায় পার্বত্য জেলা পরিষদ রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কেটেছিল। পরিত্যক্ত রাস্তাটি নতুন করে জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ইটের রাস্তা তৈরির জন্য একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে শুনেছি।’
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মুছা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পাহাড় আগেই কাটা হয়েছিল। এখন রাস্তা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কেটে ঢালু কমানো হচ্ছে। পাহাড় কাটা মাটিগুলো পাশের এলাকায় জমি ভরাটের কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজটি আমি নই, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অজিত কান্তি দাস করছেন। আমি শুধু এস্কেভেটর এবং ট্রাক মালামাল সরঞ্জামগুলো দিয়ে সহযোগিতা করছি।’
আওয়ামী লীগনেতা অজিত কান্তি দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জামছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল রাস্তাটি। ছোটখাটো যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত করতে পাহাড়ের মাটি কেটে রাস্তাটি নিচু করা হচ্ছে। মাটিগুলো পাশের এলাকায় জমি ভরাটের কাজে লাগানো হচ্ছে। কাজটি মুছা কোম্পানি আর আমি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করেন, ‘পাহাড়ের অপরপ্রান্তে কোনো গ্রাম বা জনবসতি নেই। শুধু রামজাদী এলাকায় নিচু জমি ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। প্রথম দফায় পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে রাস্তা নির্মাণের কথা বলা হয়েছিল। এখন নবগঠিত জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা নির্মাণের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে এলাকাটি এখনো ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’
অভিযোগকারীরা বলেন, ‘বর্ষায় বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এস্কেভেটর দিয়ে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা হলেও পরিবেশ ধ্বংসকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না।’
এদিকে জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যচিং প্রু মারমার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফখরুল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড় কাটা অপরাধ। রাস্তা নির্মাণ বা ফসলি জমি ভরাটের জন্য পাহাড় কাটার কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’