নিজেদের টাকায় খাল পরিষ্কার করবে সিটি করপোরেশন
তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট পরিষ্কারে আগামী শনিবার থেকেই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এগুলো হচ্ছে- জিরানি খাল, মাণ্ডা খাল ও শ্যামপুর খাল এবং পান্থপথ বক্স কালভার্ট ও সেগুনবগিচা বক্স কালভার্ট। এ সময় খাল ও বক্স কালভার্টে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এসব খাল ও বক্স কালভার্ট পর্যায়ক্রমে পরিষ্কার করার জন্য আগামী জুন মাস পর্যন্ত আমরা বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এগুলো হবে। আমরা বসে নেই। আমরা যদি মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাই, প্রকল্পনির্ভর কাজ করতে চাই, তাহলে দেখা যাবে, আগামী দুই বছরের মধ্যে কাজ আরম্ভ করতে পারব না। এজন্য আমরা নিজ অর্থায়নে কাজগুলো আরম্ভ করছি।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) হস্তান্তরের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র তাপস এসব কথা বলেন।
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, নতুন বছরের প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ায় তারপরের দিন শনিবার থেকেই আমরা প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। এসব খাল ও বক্স কালভার্টে দীর্ঘদিনের স্তুপকৃত বর্জ্য যা শক্ত হয়ে গেছে, বর্জ্য অপসারণের বিশাল কর্মযজ্ঞ আমরা হাতে নিয়েছি। আগামী মার্চের মধ্যে এই তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণ করার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি।
এই অপসারণ কার্যক্রমে ঢাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন ব্যারিস্টার শেখ তাপস। তিনি বলেন, ‘এই তিনটি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং বক্স কালভার্টগুলোর কী অবস্থা, কাজ শুরু না করলে আমরা বুঝতে পারব না। আগামী মার্চের মধ্যে এই তিনটি খাল ও দুটি বক্স কালভার্ট যদি আমরা পরিষ্কার করতে পারি, তাহলে আগামী জুন নাগাদ বাকিগুলো ধরব।’
ডিএসসিসি মেয়র আরো বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কালুনগর খালে এক দফা কিছু পরিষ্কার করেছি। বাকিটা আমরা পরিষ্কার করব। আমরা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল ধরব, ধোলাই খালের বক্স কালভার্ট ধরব। আমরা খালগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে দেব। এখানে অবৈধ সব দখল উচ্ছেদ করা হবে এবং উচ্ছেদ করার পর সেই জায়গাগুলোর সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।’
আজকের দিনটিকে ঢাকাবাসীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন আখ্যা দিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, দুটি কারণে আজকের দিনটি ঐতিহাসিক- একটি হলো ঢাকা ওয়াসার নিকট হতে জলাবদ্ধতা নিরসনের গুরুদায়িত্ব সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর। আর দ্বিতীয়টি হলো- ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। আর ইচ্ছা ও উপায়ের সেতুবন্ধন হলো রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজ ছিল না উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘কাল থেকে মনে হবে, এটা তো খুব সহজ ছিল। এমনি এমনি হয়ে গেছে। আসলে কোনো কিছুই এমনি এমনি হয় না। ৬০০ ডলার থেকে এমনি এমনি দুই হাজার ডলার মাথাপিছু আয় আমরা অর্জন করেছি, এটা (এমনি এমনি) সম্ভব না। তেমনি কেউ একজন বেতারকেন্দ্রে বসে, আই, অন বি হাফ অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ডিক্লেয়ার দ্য ইনডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ- হয়ে গেল, ইনডিপেন্ডেন্স অফ বাংলাদেশ? দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় আন্দোলন, রক্ত, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ- তারপরেই এলো স্বাধীনতা। কিন্তু আমরা পেছনেরটা ভুলে যাই। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, পেছনেরটা ভুলবেন না।’
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৮ সালের আগে ঢাকার খালগুলো তদারকি করত তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ওই খালগুলো ওয়াসার কাছে গেল তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তাই এতোদিন খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে অনেকটা সমন্বয়হীনতা ছিল। তিনি বলেন, এখন ঢাকার ২৬টি খাল ওয়াসার কাছ থেকে ডিএনসিসি এবং ডিএসসিসিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওই দুটি সংস্থা করবে। এতে নগরে আর জলাবদ্ধতা হবে না।
অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আগে বৃষ্টি হলেই খালের পানি নেমে যেত। কিন্তু এখন বৃষ্টির কয়েক ঘণ্টা পরও রাস্তা থেকে পানি নামে না। তাই নিজ উদ্যোগে ডিএনসিসির অধীনে থাকা সবগুলো খাল তারাও পরিষ্কার করেছেন। এ ছাড়া এসব খালের সৌন্দর্য বাড়াতে প্রকল্পও নিয়েছেন।
অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা ওয়াসা এবং দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঢাকা ওয়াসার পক্ষে এমডি প্রকৌশলী তাকসিম এ খান সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।