নিরপেক্ষ সরকারের গণদাবিতে জনগণ সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে : রিজভী
আওয়ামী লীগ সরকার মৃত্যুঞ্জয়ী নয় মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের অপ্রতিরোধ্য গণদাবিতে জনগণ এখন সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সরকার স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের ওপর নির্দয়ভাবে বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন জনগণ প্রতিটি পয়সার হিসেব কড়ায় গণ্ডায় নেবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতি এবং টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত—এটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। দুদক টাকা পাচারের তদন্ত শুরু করছে না। আর এ কারণেই আগামী দিনে দুর্নীতিবাজ আর টাকা পাচারকারীদের সহযোগী হিসেবে দুদককে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার মৃত্যুঞ্জয়ী নয়, এদের পতন আসন্ন।’
‘বাংলাদেশ দেউলিয়ার পর্যায়ে চলে যাবে’ মন্তব্য করে রিজভী আরও বলেন, ‘তেল মজুদের মতো ডলার নিয়েও খেলা শুরু করে দিয়েছে সরকারের সিন্ডিকেট। দেশের টাকার মানের অব্যাহত পতনে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষ। ফলে অর্থনীতি বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটা খাতেই ধস নামবে। নিত্যপণের নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধি হবে, মোট জাতীয় সঞ্চয় কমে আসবে। বৈদেশিক রিজার্ভ কমে যাবে। তৈরি পোশাকখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
রিজভী বলেন, ‘গত ১২ মে পর্যন্ত ডলারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। তবে, আগের বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রায় ১৭ শতাংশ কমে গেছে এবং উচ্চ আমদানি প্রবৃদ্ধির কারণে ডলারের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। বেশি দামে ডলার কিনে পণ্য আমদানি করায় সবশ্রেণির পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় পণ্যের মূল্যের ওপর।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এখন যে পণ্য বাড়তি মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে, তার প্রভাব সামনের মাস ও পরের মাসে পড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে, এটাই আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শুধু লুটপাটের জন্য তুঘলকি মেগাপ্রকল্প আর ইচ্ছেমতো বৈদেশিক ঋণের ফাঁদেই শেখ হাসিনার সরকার দেশকে দেউলিয়া করে শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
পদ্মা সেতুর টোল প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘গর্ব করে বলা হয়েছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। অর্থাৎ, জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের কলরেট থেকেও সরকার টাকা নিচ্ছে। গতকাল দেখলাম, পর্বতসমান টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এখন জনগণের পকেট কেটে জোর করে টাকা নিয়ে সেতু বানিয়ে সেই সেতু পারাপারের জন্য আবার দীর্ঘকাল জনগণের পকেট কাটা চলতে থাকবে।’
রিজভী বলেন, ‘জনগণের অর্থকে কীভাবে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী লোপাট করেছে, তার নতুন নতুন লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে আসছে। এই সমস্ত অজানা লুটপাটের কাহিনী বেরিয়ে আসতে শুরু করায় আওয়ামী সরকার এখন দিশেহারা। সেজন্যই আকস্মিকভাবে জিয়া পরিবার ও বিএনপির বিরুদ্ধে বানোয়াট কাহিনী প্রচার করে নিজেদের চেহারাকে আড়াল করতে ব্যর্থ চেষ্টা করছেন মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।’
রিজভী আরও বলেন, ‘বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার করাই এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি। জনগণ বিশ্বাস করে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের মূলনীতি—টাকা পাচার আর দুর্নীতি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি নেতা মীর সরফত আলী সপু প্রমুখ।