নিরাপত্তা চেয়ে শিক্ষার্থীসহ ১৫ গণমাধ্যমকর্মীর পক্ষে থানায় জিডি
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হুমকি দিয়েছেন—এমন অভিযোগ এনে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ১৫ গণমাধ্যমকর্মীর পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে।
দৈনিক দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি নিহার সরকার অংকুর গত শনিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় এ জিডি করেন। ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সাংবাদিকসহ অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাসান বলেন, ‘আমরা জিডি করার পর প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছি। পরবর্তী সময়ে কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
যাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয় তাঁরা হলেন—দৈনিক দেশ রূপান্তর প্রতিনিধি নিহার সরকার অংকুর, আমার সংবাদ-এর হাবিবউল্লাহ বেলালি, যায় যায় দিনের বায়েজিদ হাসান, খোলা কাগজের তিতলি দাস, একুশে টিভি অনলাইনের আশিক আরেফিন, দৈনিক সময়ের আলোর আশিকুর রহমান, বাংলাভিশন অনলাইনের জিসাদুজ্জামান জিসান, বাংলা ট্রিবিউনের মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, দৈনিক অধিকারের সরকার আব্দুল্লাহ তুহিন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের ফটোগ্রাফার মোস্তাফিজুর রহমান ও নওশাদ, প্রেসক্লাবের সদস্য সিফাত শাহরিয়ার প্রিয়ান, নওয়াব শওকত জাহান কিবরিয়া, শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য ও ফজলুল হক পাভেল।
এর আগে ছাত্রলীগ না করায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের (২০১৯-২০) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে রুমের ভেতর ডেকে নিয়ে গলায় ও বুকের ওপর দাঁড়িয়ে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে লেখালেখির কারণে গণমাধ্যমকর্মীরা ছাত্রলীগের হুমকির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের।
এদিকে ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির গতকাল রোববার বিকেলে প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। পরে এর সময় বাড়িয়ে আজ সোমবার করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. উজ্জ্বল কুমার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘থানায় জিডির বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবজারভেশনে আছে।’
প্রক্টর আরও বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে ছাত্রলীগ না করায় মারাত্মকভাবে নির্যাতন করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ঘটনার দিন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকেরা সংবাদ প্রকাশ করলে গত শুক্রবার এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জোর করে একটি লিখিত বক্তব্য আদায় করা হয়।
ঘটনার পর থেকে অভিযোগকারী ১৫ জন অনিরাপদ রয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংবাদকর্মীরা আরও বলেন, ‘আমরা ওয়ালিদ নিহাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার সংবাদ করায় তারা বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যা গত শুক্রবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
এ ছাড়াও ওইদিন রাতে তাঁরা এক শিক্ষার্থীকে দিয়ে জোর করে লিখিয়ে নেয় যে, এই আন্দোলনে বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনার নেতৃত্বে রয়েছেন সাংবাদিকেরা।
ছাত্রলীগের এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।