নির্বাচন নিয়ে বহির্বিশ্বও প্রশ্ন তুলছে : আমীর খসরু
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন দেশে ও বিদেশে আলোচনায় রয়েছে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে তার দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি হবে না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা, তা নিয়ে কথা হচ্ছে।’
আজ সোমবার (১৫ মে) বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু এ কথা বলেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কোই, অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলে তো সে ধরনের আলোচনা হয় না। দেশে ও বিদেশে এই যে প্রশ্ন, তা তো প্রধানমন্ত্রীর আত্মসম্মানের ব্যাপার। কারণ, বাংলাদেশ তো দেশে আইনের শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আইনে স্বাক্ষর করেছি।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবৈধ দখলদার এবং ফ্যাসিস্ট। তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আজকে বিশ্ব বিবেক বাংলাদেশকে প্রশ্ন করছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হওয়ায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। এখন তারা বলছে যে, সংবিধানের বাইরে তারা নির্বাচন করবে না, কিন্তু সংবিধানতো জনগণের জন্য। সংবিধানের জন্য তো জনগণ নয়। সারা বিশ্বে সংবিধানে জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষা করা হয়েছে। সব সংবিধানের মৌলিক ও নীতিগত দিক হলো রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ সুরক্ষা করতে হবে।’
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রথমে রাষ্ট্র ও জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল স্বাধীনতার পর বাকশাল কায়েম করে। আজকেও তারা ভোটাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা কেড়ে নিয়েছে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোট চুরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসলে সাংবিধানিকভাবে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য যত ষড়যন্ত্র ও আইন আছে আওয়ামী লীগ সরকার তা করেছে। বাকশাল করেছে, পঞ্চম সংশোধনী করেছে। এখন তারা ‘জাতীয় পরিসেবা আইন’ করেছে। এখানে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না। এটা হচ্ছে সংবিধানের পুরোপুরি বিরোধী এবং আন্তর্জাতিক আইনেরও বিরোধী।’
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘প্রতিনিয়ত গুম খুন ও গায়েবি মামলা দিয়ে মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা ফের নির্বাচনে ভোট চুরির প্রকল্প নিয়েছেন। সেজন্যই খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়েছে। কারণ তিনি বাইরে থাকলে জনগণের আন্দোলনে তাদের নির্বাচনী প্রকল্প ভেসে যাবে। সুতরাং এটাও তাদের নির্বাচনে ভোট চুরির একটি প্রকল্প। এখন ৪৮ বছর পর জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসলে দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে। তারা এভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। এককথায় ভোট চুরি ও জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য যা কিছু দরকার সবই অবলম্বন করছে সরকার। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। অথচ, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আগামীতেও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হবে।’
‘বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে আগামীর বাংলাদেশ। সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ন ম এহসানুল হক মিলন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।