নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের টানে সাগরে ছুটছে জেলে
বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ ক্ষণগণনা শেষ হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল থেকেই জেলেরা আবার ট্রলার নিয়ে ছুটছে গভীর সাগরে। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় বরগুনা সদর, আমতলী, পাথরঘাটা, তালতলী উপজেলার বিভিন্ন জেলেপল্লীতে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
জানা যায়, টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরু করেছেন জেলেরা। মাছ ধরার নৌকা নিয়ে কেউ কেউ আবার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে সাগরে নামা শুরু করেছে। আজ শুক্রবার থেকে ছোট মাছগুলো বাজারে পাওয়া গেলেও ইলিশ পেতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
ট্রলারগুলো মাছ ধরে কয়েকদিন পর ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার প্রাদুর্ভাবে ও ৬৫ দিন সমুদ্রে মৎস্য আহরণের অবরোধের কারণে বেকার বসে থেকে ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে সমুদ্র উপকূলীয় জেলেদের। জেলেরা জানিয়েছেন, করোনা প্রেক্ষাপটে ধার-দেনা শেষে সমুদ্রে নামার আগে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সমুদ্রে নামছেন তারা।
বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমের সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণও ছিল এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়। এতে করে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বিপাকে পড়ে জেলেরা। তবে সরকার তাদের পুনর্বাসনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সহায়তা দিয়েছে।
মৎস্যবন্দর খ্যাত সাগর পাড়ের আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটা জেলেপল্লীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার ছাড়া এসব জেলেদের আর কোনো পেশার অভিজ্ঞতা নেই।
জেলেরা জানান, মাঝারি কিংবা বড় আকারের ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে খরচ হয়ে থাকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এবার ৬৫ দিন বেকার থাকায় পুঁজি শেষ করে ধার-দেনায় জর্জরিত তারা। পাশাপাশি আড়তদার কিংবা দাদনদাররাও খুব একটা ঝুঁকি নিতে রাজি নন বলে জানান তারা। বরফকল মালিকরাও জানিয়েছেন, বছরের পুরোটাই তাদের টেকনিশিয়ানসহ শ্রমিকদের বেকার বসিয়ে টাকা গুণতে হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক আজিজুল হক জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নিষেধজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। চলমান ভরা মৌসুমে প্রায় তিন লাখ জেলে সাগর ও নদীতে ইলিশ শিকারে নামতে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ইলিশ সাগর ছেড়ে নদীর দিকে ছুটে। তখন বেশি ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। এবার মৌসুমের শুরুতেই ইলিশ মিলছে। গত সোমবার অমাবশ্যার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ও সাগর মোহনায় বেশি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এ সময়ে।
২০১৫ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তা কেবলমাত্র চট্টগ্রামের ২৫৫টি ফিশিং বোডের জন্য বলবৎ ছিলো। গত বছর থেকে সাগরে মাছ আহরণের জন্য ব্যবহৃত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে জেলেরা আন্দোলন করলেও নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে। এতে চরম বিপাকে পড়েন এ পেশার সঙ্গে জড়িত জেলে পরিবার, ট্রলার মালিক-শ্রমিক, আড়তদার, দাদনদার, বরফকলের সঙ্গে সম্পৃক্তসহ জাল প্রস্তুতকারী, তেল সরবরাহকারী, খাবার সরবরাহকারী লাখ লাখ পরিবার।