নেতৃত্ব মানতে না পেরে মুহিবুল্লাহকে হত্যা!
রোহিঙ্গানেতা মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। মুহিবুল্লাহর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় তাঁর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশ।
এদিকে মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ দাবি করেন, নেতৃত্ব সহ্য করতে না পেরেই রোহিঙ্গাদের বিপদগামী একটি গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ অফিসে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সামনেই অস্ত্রধারীরা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা বা কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামক ক্যাম্পভিত্তিক সংগঠনটির চেয়ারম্যান ছিলেন মুহিবুল্লাহ। তাঁকে হত্যার পর সংগঠনটির অন্য সদস্যদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের সিটওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ডিগ্রিধারী ছিলেন মুহিবুল্লাহ। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সপরিবারে আশ্রয় নেন তিনি। পরে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরব হন। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সফরে আসা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রোহিঙ্গাদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশ-বিদেশে আলোচনায় আসেন মুহিবুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরেই গঠন করেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’। তিনি এর চেয়ারম্যান হয়। সেই থেকে এই রোহিঙ্গা নেতা আন্তর্জাতিকভাবেও আলোচনায় আসেন। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহাসমাবেশ করে ফের আলোচনায় আসেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের মধ্যেই একটি বিপদগামী দল পরিকল্পিতভাবে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে বলে দাবি উঠেছে। নেতৃত্ব সহ্য করতে না পেরে ওই গ্রুপটি তাঁকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভাই হাবিবুল্লাহ। ইতোমধ্যে হাবিবুল্লাহ গণমাধ্যমে বেশকিছু নামও প্রকাশ করেছেন। হাবিবুল্লাহর মতে, মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে নানাভাবে আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধীরাই তাঁর ভাইকে হত্যা করেছে।
হাবিবুল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সময় রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অফিসে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা। কেউ সংবাদ শুনছিলেন, কেউ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন। এই সময় বন্দুকধারীরা অফিসে ঢুকে অন্তত পাঁচ রাউন্ড গুলি করে মুহিবুল্লাহকে। উপস্থিত অন্য রোহিঙ্গাদেরও মারধর করা হয়। গুলির শব্দ শুনে অফিসে ছুটে আসেন হাবিবুল্লাহর চাচাত ভাই নুরুল আমিন।
হাবিবুল্লাহ জানান, মুহিবুল্লাহর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আজ বিকেল ৩টায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে আসরের নামাজের পর কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জানাজার পর ক্যাম্পের নির্ধারিত কবরস্থানে মুহিবুল্লাহকে দাফন করা হয়।
এদিকে, এ ঘটনার পর থেকে উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। যদিও হত্যাকাণ্ডটি কারা ঘটিয়েছে সে দায় এখনও কেউ স্বীকার করেনি। মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর ক্যাম্পগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, ক্যাম্পের পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা রুজু করা হবে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।