নেত্রকোনায় ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষে আহত ২৫
নেত্রকোনা সদর উপজেলার দুই ইউনিয়ন ও বারহাট্টায় দুই ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বুধবার সন্ধ্যায় ও রাতে এবং বৃহস্পতিবার পৃথক হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু বকর সিদ্দিক পান দলীয় প্রতীক নৌকা। বিদ্রোহী প্রার্থী ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোটরসাইকেল প্রতীক।
প্রতীক পাওয়ার পর দুই প্রার্থীর সমর্থকরা এলাকায় গণসংযোগে বের হয়। স্থানীয় দক্ষিণ বিশিউড়া বাজারে গতকাল সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিকের সমর্থকরা নৌকার পক্ষে মিছিল বের করে। একই সময়ে বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম তার লোকজন নিয়ে ওই বাজারে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুই প্রার্থীর সমর্থকরা মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম মনিষ (৩৫), স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ (৪৫), আবু নাসের (৩৭), শফিকুল ইসলাম মাসুম (৩২), মনিক মিয়াসহ (৩০) উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়।
এ সময় দক্ষিণ বিশিউড়া বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসের চেয়ার- টেবিল, আসবাবপত্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর এবং নৌকার প্রার্থীর ছবিসম্বলিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ সময় বাজারে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষ থেকে এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে নেত্রকোনা মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় দলীয় প্রার্থীর সমর্থক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়ে অফিসের আসবাবপত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেছে। আমরা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অন্যদিকে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কোনও কর্মী সমর্থক হামলা এবং ভাঙচুর করেনি। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকার লোকজন বিষয়টি ভালো জানে।’
একই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপি নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল কাদের সুজা চশমা প্রতীক পান। ওই দিন রাতে তার সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলে তার লোকজনের ওপর ইউনিয়নের সুলতানগাতী বাজারে হামলা করে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আজহারুল হক তুহিনের সমর্থকরা। এ সময় ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ খান (৪০), শফিকুল কাদেরের সমর্থক তমাল খান (৩২), আলমগীর মনসুর খানসহ (৩০) কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়। হামলাকারীরা তমাল খানের দোকান ভাঙচুর এবং সুজার লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। গুরুতর আহত তমাল খানকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
অন্যদিকে জেলার বারহাট্টার রায়পুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজুর পক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য বের হয়। তাদের অটোরিকশা ও মাইক ভাঙচুর করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলী আকবর তালুকদারের সমর্থকরা।
এ ছাড়া বারহাট্টার সিংধা ইউনিয়নে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে গতকাল বুধবার রাতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় হামলাকারীরা তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং পাঁচজনকে পিটিয়ে আহত করে।
সুজন চৌধুরীর দাবি, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মুরশেদা আক্তার আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ বিশিউড়া বাজারে ভাঙচুর হওয়া আওয়ামী লীগ অফিস পরিদর্শন করেন।
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবাইকে সহনশীল হতে হবে। তা না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাতে সহিংস ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।’