নেত্রকোনায় মিলছে বাহারি রঙের ফুলকপি-বাঁধাকপি
নেত্রকোনায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বাহারি রঙের ফুলকপি ও বাঁধাকপি। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই রঙিন কপি চাষ। ফলন হওয়ায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। খেতে সুস্বাদু ও দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে এসে এলাকায় ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। এ ছাড়া রঙিন কপি চাষ করতে পরামর্শ নিচ্ছেন তাঁরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, আকর্ষণীয় উচ্চ প্রোটিন ও ঔষধি গুণসমৃদ্ধ এ সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় এবার এক হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে বাহারি রঙের কপি। এ ক্ষেত্রে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
জেলার বারহাট্রা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস। ধান চাষের পাশাপাশি নিজের ৬০ শতক জমিতে গেল চার বছর ধরে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করছেন তিনি। ধানের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় তিনি সারা বছরই সবজি আবাদ করেন।
সন্তোষ বিশ্বাস জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় সবুজ, হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি এবং লাল রঙের বাঁধাকপি চাষ করেছেন তিনি। জানুয়ারি থেকেই মাঠে প্রতিটি কপি ৭০ থেকে ৮০ টাকা করে বিক্রি করছেন তিনি।
এই কৃষক আরও জানান, ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় তার দেখাদেখি উপজেলার অনেক কৃষক বাহারি রঙের কপি চাষ করছেন। এ ছাড়া আটপাড়া, কেন্দুয়া, পূর্বধলা ও জেলা সদরে বাহারি রঙের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষাবাদ করা হচ্ছে, যা স্থানীয় বাজারগুলোতে মিলছে।
কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস বলেন, বাহারি রঙয়ের কপি উৎপাদনের বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সবুজ, হলুদ ও বেগুনি রঙের প্রতিটি ফুলকপি মাঠেই বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু হওয়ায় বাহারি রঙের এ ফুলকপি আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে চাষ করবেন বলে জানান এই কৃষক।
একই উপজেলার মনাষ গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল মোতালিব। ধান চাষের পাশাপাশি নিজের ৮০ শতক জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন জাতের সবজি আবাদ করছেন তিনি।
এই কৃষক বলেন, এ বছর স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় সবুজ, হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুলকপি চাষ করেছেন তিনি। ফলন ভাল হওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকেই কপি বিক্রি করছেন তিনি। মাঠেই প্রতিটি কপি বিক্রি হচ্ছে ৭০ খেকে ৮০ টাকায়। তাঁর এই কপি চাষ করে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে, এবার পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, জেলা সদরের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কামরুল হাসানের স্ত্রী সুফিয়া আক্তার প্রথমবারের মতো ২০ শতক জমিতে চাষ করেছেন বাহারি রঙের ফুলকপি। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে শুরুতেই তিনি সফলতা পেয়েছেন। তার ফলানো কপি জেলা শহরের সবজি দোকানিরা প্রতিদিনই বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন।
নেত্রকোনা পৌর শহরের আনন্দ বাজারের সবজি বিক্রেতা রিপন জানান, প্রতিদিন রাজেন্দ্রপুর গ্রামের চাষির কাছ থেকে হলুদ ও বেগুনি রঙের শতাধিক কপি আনেন তিনি। ভোক্তাদের কাছে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এ কপির। অল্প সময়ে অধিক লাভে বিক্রি হচ্ছে এসব কপি।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, গেল বছর অল্প পরিসরে চাষ হলেও আকর্ষণীয় উচ্চ প্রোটিন ও ঔষধি গুণসমৃদ্ধ এ সবজির চাহিদা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার বারহাট্রা, আটপাড়া, কেন্দুয়া, পূর্বধলা ও জেলা সদর—পাঁচ উপজেলায় এবার এক হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে বাহারি রঙের কপি।