নড়াইলে বিরোধের জেরে পুলিশি বাধায় ঈদেও বাড়ি ফিরতে না পেরে মানববন্ধন
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হামিদুপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর ও হাজরাখালী গ্রামের লোকজন পুলিশি বাধায় ঈদে বাড়ি ফিরতে না পেরে মানববন্ধন করেছে।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কালিয়া উপজেলার হামিদুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মোস্তফা স্টোরের সামনের রোডে এলাকাবাসী এ মানববন্ধন করে।
এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন হামিদুপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ, হাজরাখালী গ্রামের তৈয়েবুর রহমান টিংকু, হাজরাখালী গ্রামের নজরুল ইসলাম, মহাসিন প্রমুখ।
সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ সমর্থক হাজরাখালী গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাজারে ব্যবসা করি। আমাকে বাড়ি যেতে দেয় না এবং আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট করে কমপক্ষে ১৬ লাখ টাকার বেশি নিয়ে গেছে।’
হাজরাখালী গ্রামের তৈয়েবুর রহমান টিংকু অভিযোগ করে বলেন, ‘তিন বছরের বেশি সময় আমরা বাড়িছাড়া। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারি না। এমনকি ঈদের দিনও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় এমপি কবিরুল হক মুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সমাধান করতে বলেছি। তাতেও কোনো ফল হয়নি।’
গোলাম মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার সমর্থকরা জামিনে থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে যেতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করলেও কোনো লাভ হয়নি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে আবারও জানাতে চাই, আমরা কোনো মারামারি করব না। আমাদের মারলেও আমরা মার খাব এবং পুলিশের সহযোগিতা চাইব, বাঁচার জন্য। কিন্তু চেয়ারম্যান পলি বেগম, ঠাণ্ডা মোল্যাসহ তার লোকজনের মিথ্যা কথায় পুলিশ আমাদের লোকজনকে বাড়ি যেতে দিচ্ছে না।’ গোলাম মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘আমার সমর্থক প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি পরিবার প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে বাড়িছাড়া।’
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হামিদুপুর ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলা-মামলার ভয়ে বাড়ি-পরিবার ফেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় অর্ধশত পরিবারের পুরুষরা। দীর্ঘ তিন বছরের অধিক সময় ধরে হাজরাখালী রামানন্দপুর ও সিলিমপুর গ্রামের এসব লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। এ জন্য জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তারা।
জানা গেছে, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ৩ নম্বর হামিদুপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ এবং বর্তমান চেয়ারম্যান পলি বেগমের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র বিরোধ চলে আসছে। এ ঘটনায় হত্যাসহ একাধিক মামলাও হয়েছে। মামলায় গোলাম মোহাম্মদসহ তার লোকজন আদালত থেকে জামিন পেলেও বর্তমান চেয়ারম্যান পলি বেগমসহ তার লোকজন বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না।
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বাড়িছাড়া পরিবারপ্রধানরা বাড়িতে আসতে চাওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
হামিদুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পলি বেগম ও ঠাণ্ডা মোল্যা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গোলাম মোর্শেদসহ তাঁর লোকজন আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, শান্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।’
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘আমরা কাউকে বাড়ি যেতে বাধা দিচ্ছি না। তবে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলার জন্য উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সুষ্ঠু সমাধান করার চেষ্টায় আছি।’