পরীকে ছাড়াই জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ, হাইকোর্টে মামলা স্থগিত
চিত্রনায়িকা পরী মণিকে ছাড়াই ঢাকার বিশেষ জজ-১০ আদালতে করা হয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ওই একই মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মামলা বাতিলের জন্য করা আবেদনের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
হাইকোর্টে পরী মণির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও অ্যাডভোকেট মো. শাহীনুজ্জামান। এর আগে ৩০ জানুয়ারি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ ও মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন চিত্রনায়িকা পরী মণি।
গত ৫ জানুয়ারি চিত্রনায়িকা পরী মণিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে আদালত পরী মণিসহ তিনজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন নামঞ্জুর করেন। অপর দুই আসামি হলেন আশরাফুল ইসলাম দীপু ও কবির হোসেন।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, আজ সকালে ঢাকার বিশেষ জজ-১০ আদালতের বিচারক মো. নজরুল ইসলামের আদালতে প্রথম দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
এদিন পরী মণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী এনটিভি আনলাইনকে বলেন, ‘আজ পরী মনি আদালতে হাজির হননি। তবে সময়ের আবেদন করেন। বিচারক তখন তাঁর অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।’
আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত আরও বলেন, ‘পরী মণির বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল আজ। কিন্তু, পরি মণি মামলার বাদী র্যাব-১–এর ডিএডি মজিবুর রহমান সাক্ষ্য দেন। এরপর পরী মণি ও কবীর হালদারের পক্ষে অ্যাডভোকেট মাজেদুর রহমান মামুন তাঁকে জেরা করেন।’
অপরদিকে, কবীর হালদারের পক্ষে জেরা শেষ হলেও পরী মণির পক্ষে শেষ হয়নি বলে জানান এ আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘একই মামলার অন্য আসামি আশরাফুল ইসলাম দিপুর পক্ষে তাঁর আইনজীবী এস এম আক্তারুজ্জামান হিমেল জেরা করেন। পরে আদালত আগামী ২৯ মার্চ অবশিষ্ট জেরা এবং পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন।’
গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর বনানীতে পরী মণির বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। পরে তাঁকে গুলশান থানায় করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ৩১ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত পরী মণির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। এ মামলায় ৪ অক্টোবর পরী মণিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযোগপত্র দাখিলের পর ১০ অক্টোবর পরী মণি ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে পুনরায় জামিন নেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরী মণির বাসা থেকে জব্দ করা মাদকদ্রব্যের বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সিআইডিকে জানানো হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরী মণির নামে মদজাতীয় পানীয় সেবনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের ৩০ জুন ওই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। পরী মণি এ মামলার দুই আসামি আশরাফুল ইসলাম ও কবির হোসেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে বাসায় রেখেছিলেন। মাদকদ্রব্য রাখার বিষয়ে তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। পরী মণি তাঁর গাড়িটি মাদকদ্রব্য বহনের কাজে ব্যবহার করতেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরী মণিসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নেন এবং মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-১০-এ বদলির নির্দেশ দেন। এর আগে গত বছরের ৪ অক্টোবর আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন সিআইডির পরিদর্শক এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মোস্তফা কামাল।