পরী মণির ক্ষেত্রে রিমান্ডের অপব্যবহার হয়েছে : হাইকোর্ট
চিত্রনায়িকা পরী মণির ক্ষেত্রে রিমান্ডের অপব্যবহার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘পরীমণির মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ডের প্রয়োজন ছিল না। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবেদন করলেন আর বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর করলেন, এটা তো সভ্য সমাজে হতে পারে না।’
আজ বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পরীমণির জামিন আবেদন নিয়ে নিম্ন আদালতের আদেশ বাতিল সংক্রান্ত রুল শুনানিতে আদালত এসব কথা বলেন। দুপুর ২টা আদেশের জন্য রেখেছেন আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান। পরী মণির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান। রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও সৈয়দা নাসরিন।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘পরী মণির তো জামিন হয়েছে। তাই রুল এখন অকার্যকর হয়ে গেছে।’
তখন আদালত বলেন, ‘জামিন হওয়ায় রুলের একটি অংশ নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আরেকটি অংশ রয়েছে। এ ছাড়া পরী মণিকে বার বার রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে আরেকটি আবেদন রয়েছে। সে বিষয়ে আমরা আদেশ দেব। রিমান্ডের বিষয়ে একটি গাইডলাইন আছে। কিন্তু তারা সেটা অনুসরণ করেননি। আমরা এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দিতে পারি।’
আদালত আরও বলেন, ‘কীসের ভিত্তিতে রিমান্ড দিলেন সংশ্লিষ্ট কোর্টের রেকর্ড কল করতে পারি, ব্যাখ্যা চাইতে পারি।’
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারার (জামিন শুনানি সংক্রান্ত) আবেদনগুলো কত দিনের মধ্যে শুনবেন সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) জামিন পান চিত্রনায়িকা পরীমণি। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর আজ গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে পরী মণি মুক্তি পান। সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে তাঁকে বহনকারী একটি গাড়ি কারাগার থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় কারাফটকে গণমাধ্যম ও শত শত স্থানীয় উৎসুক জনতা ভিড় করে। একটি সাদা হুটখোলা গাড়িতে করে পরী মণিকে কারাগার থেকে আনতে যান তাঁর আইনজীবী ও স্বজনরা।
এ সময় পরী মণি গাড়িতে দাঁড়িয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। মুক্তির পর খুবই হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল চিত্রনায়িকাকে। তিনি সাদা টি-শার্ট পরে ছিলেন। তাঁর মাথায় সাদা ওড়না পেচানো আর চোখে ছিল রোদচশমা। মাস্কও পরেছিলেন সাদা। গাড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি সেলফি তুলেন। ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন ভক্তের সঙ্গে হাতও মেলান। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পরী মণি শুধু বলেন, ‘থ্যাংক ইউ, ধন্যবাদ।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরী মণির জামিনের আদেশ দেন। যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা ছিল না, তাই মুক্তিতে কোনো বাধা ছিল না।
পরী মণি কারাগার থেকে মুক্ত হবেন এমন সংবাদে গতকালও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারাফটকে ভিড় করেছিলেন গণমাধ্যমকর্মী ও তাঁর ভক্তরা। কিন্তু তাদের হতাশ হতে হয়। কারণ, গতকাল জামিনের কাগজ-পত্র কারাগারে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় তিনি মুক্তি পাননি। আজ সকাল জামিনের কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরী মণি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় পরী মণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট র্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে।
এই মামলায় তিন দফায় রিমান্ড শেষে গত ২১ আগস্ট আদালতের নির্দেশে পরী মণিকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন গত ২২ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে পরী মণির জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান। পরে আদালত জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
১৩ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির দিন ধার্য করার আদালতের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে গত বুধবার হাইকোর্টে আবেদন করেন পরী মণি। পরদিন বৃহস্পতিবার পরী মণির নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন অবিলম্বে শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত জামিন শুনানির যে দিন নির্ধারণ করেছিলেন, তা কেন বাতিল করা হবে না মর্মে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।