পরী মণির দ্বিতীয়-তৃতীয় দফা রিমান্ড : হাইকোর্টে ক্ষমা চাইলেন দুই বিচারক
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর বিষয়ে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন নিম্ন আদালতের দুই বিচারক—দেবব্রত বিশ্বাস এবং আতিকুল ইসলাম।
ঢাকার দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আজ রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন। আজ দুপুর ২টায় এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরী মণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর বিষয়ে আদালতের দুই বিচারককে ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়ে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিল হাইকোর্ট।
পরে দুই বিচারকের আইনজীবী আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল বলেন, ‘দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। আদালত এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হবে।’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়িকা পরী মণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানো নিম্ন আদালতের দুই বিচারককে পুনরায় ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২৪ অক্টোবরের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওইদিন শুনানিতে দুই বিচারকের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দুই বিচারক অল্প বয়স্ক, তাঁরা পুনরায় ক্ষমা চেয়েছেন।’ এ সময় আদালত বলেন, ‘তাহলে তাঁদের পুনরায় ব্যাখ্যা দিতে বলুন।’
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। সেদিন আদালত বলেন, ‘লিখিত ব্যাখ্যায় হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন (হেয়) করা হয়েছে।’
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর পরী মণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করা দুই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গত ৮ সেপ্টেম্বর পাঁচ পৃষ্ঠার প্রকাশিত ওই আদেশে চিত্রনায়িকা পরী মণিকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বলেন, ‘পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বোঝা উচিত—মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আইনি ভিত্তি ছাড়া পুলিশ রিমান্ড চাইতে পারে না। অথচ, পুলিশ পরী মণিকে তিন বার রিমান্ডে নিয়েছে, যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’
এর আগে পরী মণিকে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছিল মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)। পরী মণিকে তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা চেয়ে গত ২৯ আগস্ট আবেদন করে আসক। আসকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মো. মুজিবুর রহমান ও ড. সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
আবেদনে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা ও রিমান্ডের আবেদন করার কারণে সংশ্লিষ্ট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ ও র্যাবের প্রতি কারণ দর্শাতে রুল জারির আর্জি জানায়।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট একই হাইকোর্ট বেঞ্চ পরী মণির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে আদেশ দেন। ১ সেপ্টেম্বর রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ৩১ আগস্ট পরী মণির জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর ১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান পরী মণি।
গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানী বনানীর বাসা থেকে পরী মণি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে র্যাব। এ সময় পরী মণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও তার সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে র্যাব। ওইদিন বিচারক মামুনুর রশিদ দুই আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ড শেষে গত ১০ আগস্ট বনানী থানার মামলায় পরী মণিকে পুনরায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। পরে গত ১৯ আগস্ট এ মামলায় তৃতীয় দফায় পরী মণিকে আরও এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম।
গত ১ সেপ্টেম্বর সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্ত হন পরী মণি।