পরী মণির বিরুদ্ধে মাদক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ৯ জুলাই
রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় চিত্রনায়িকা পরী মণির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ৯ জুলাই ধার্য করেছেন আদালত।
আজ সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল।
এদিন পরী মণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী আদালতকে জানান, আপিল বিভাগ থেকে মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশের কপি দাখিল করেন। এরপর আদালত পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ৯ জুলাই তারিখ ধার্য করেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরী মণিসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নেন এবং মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-১০ এ বদলির নির্দেশ দেন। এর আগে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর আদালতে এ মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন সিআইডির পরিদর্শক এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মোস্তফা কামাল।
২০২১ সালের ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরী মণিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরের দিন তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট বাদীসহ র্যাব-১ এর সদস্যরা গুলশান-১ গোলচত্বরে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় বিকেল ৪টা ৫মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন, পরী মণি বনানীর একটি বাসায় সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দিপুর মাধ্যমে বিদেশি মদ সংগ্রহ করে নিজের বাসায় মজুত রেখেছেন। তখন তারা বাসায় অবস্থান করছিলেন। পরে বাসায় অভিযান চালিয়ে নারী র্যাব সদস্যদের সহায়তায় পরী মণিকে আটক করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, পরী মণির দেখানো মতে শয়নকক্ষের একটি কাঠের ফ্রেমের ভেতর থেকে বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া শয়নকক্ষ থেকে একটি সাদা জিপারে রাখা চার গ্রাম আইস বা ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করা হয়। এ সময় এক ব্লট এলএসডি মাদকও জব্দ করা হয়। চিত্রনায়িকা পরী মণির বাসা থেকে জব্দ করা বিদেশি মদসহ অন্যান্য মাদকের আনুমানিক বাজারমূল্য দুই লাখ সাত হাজার টাকা। পরী মণি এসব মদ কবির নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, চিত্রনায়িকা পরী মণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়—তিনি প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মদ সংগ্রহ করতেন।
এ মামলায় ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর চিত্রনায়িকা পরী মণিসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মোস্তফা কামাল।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, পরী মণির বাসা থেকে জব্দ করা মাদকদ্রব্যের বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল না। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরী মণির নামে মদজাতীয় পানীয় সেবনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালের ৩০ জুন ওই লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়। পরী মণি বিভিন্ন স্থান থেকে এই মামলার দুই আসামি আশরাফুল ইসলাম ও কবির হোসেনের মাধ্যমে অবৈধ মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে বাসায় রেখেছিলেন। মাদকদ্রব্য রাখার বিষয়ে তিনি কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। এছাড়া পরী মণি তার ব্যবহৃত গাড়িটি মাদকদ্রব্য বহনের কাজে ব্যবহার করতেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পরী মণির বাসা থেকে জব্দ করা মাদকদ্রব্যের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে দেখা গেছে, সাতটি বোতলে রাখা তরল পদার্থের মধ্যে ‘অ্যালকোহল’ রয়েছে। এ ছাড়া কাগজের প্যাকেটে রাখা দানাদার পদার্থে ‘মেথামফিটামিন’ রয়েছে এবং ব্লাটার পেপারে ‘এলএসডি’ পাওয়া গেছে। অভিযোগপত্রে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।