পরী মণির রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন দুই বিচারক
ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরী মণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করায় হাইকোর্টের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দুই বিচারক।
দুই বিচারক হলেন—দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম। আজ বুধবার হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন জানান তাঁরা।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর পরী মণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করা দুই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গত ৮ সেপ্টেম্বর পাঁচ পৃষ্ঠার প্রকাশিত ওই আদেশে চিত্রনায়িকা পরী মণিকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট বলেন, পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বোঝা উচিত—মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আইনি ভিত্তি ছাড়া পুলিশ রিমান্ড চাইতে পারে না। অথচ, পুলিশ পরী মণিকে তিন বার রিমান্ডে নিয়েছে, যা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
মাদক মামলায় পরী মণিকে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে লিখিত আদেশে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ কথা বলেন।
হাইকোর্ট বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরী মণিকে তিন বার রিমান্ডে নিয়েছেন। যেখানে প্রথম বারই রিমান্ডে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার যথেষ্ট সময় পেয়েছেন।
কী তথ্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরী মণির রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা জানতে চান হাইকোর্ট। দশ দিনের মধ্যে এর ব্যাখ্যা দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করা হয়। আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) মামলার নথিসহ (সিডি) তদন্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
এর আগে পরী মণিকে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেছিল মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)। পরী মণিকে তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা চেয়ে গত ২৯ আগস্ট আবেদন করে আসক। আসকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মো. মুজিবুর রহমান ও ড. সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
আবেদনে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা ও রিমান্ডের আবেদন করার কারণে সংশ্লিষ্ট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ ও র্যাবের প্রতি কারণ দর্শাতে রুল জারির আর্জি জানায়।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট একই হাইকোর্ট বেঞ্চ পরী মণির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে আদেশ দেন। ১ সেপ্টেম্বর রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ৩১ আগস্ট পরী মণির জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর ১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান পরী মণি।
কবে আটক হন পরী মণি?
গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানী বনানীর বাসা থেকে পরী মণি ও তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে র্যাব। এ সময় পরী মণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও তার সহযোগী দীপুর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে র্যাব। ওইদিন বিচারক মামুনুর রশিদ দুই আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ড শেষে গত ১০ আগস্ট বনানী থানার মামলায় পরী মণিকে পুনরায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। পরে গত ১৯ আগস্ট এ মামলায় তৃতীয় দফায় পরী মণিকে আরও এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম। শেষ দফা রিমান্ড মঞ্জুর করা দুই বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামকে ব্যাখ্যা প্রদান করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
গত ২১ আগস্ট শনিবার পরী মণিকে তৃতীয় দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটট আশেক ইমাম।
পরে পরী মণিকে বারবার রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে এ সংক্রান্ত নথি ও তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। আর ১৫ সেপ্টেম্বর (আজ) তাদের হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। একই সঙ্গে শুনানির দিনও নির্ধারণ করা হয়।
গত ১ সেপ্টেম্বর সকালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্ত হন পরী মনি।