পাঁচ মাস আগের অর্ডার, এখনো পণ্য তৈরি হচ্ছে, এ কেমন কথা!
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালতে আজ শুক্রবার বিকেলে রিমান্ড শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ দেন।
এর আগে বিকেল ৩টায় কড়া পুলিশি প্রহরায় রাসেল ও তাঁর স্ত্রীকে আদালতের এজলাসে হাজির করে পুলিশ। তখন রাসেলকে কাঠগড়ায় এবং তাঁর স্ত্রী শামীমাকে বাইরে রাখা হয়।
৩টা পাঁচ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। তখন সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) আলমগীর হোসাইন মামলার নম্বর ধরে ডাক দেন।
এরপর রাসেলের পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এ মামলার কাগজ আমরা এখনো পাইনি। পুলিশের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়নি।’
তখন বিচারক বলেন, ‘মামলার কপি আপনারা থানা থেকে সংগ্রহ করবেন। আর আদালতে আইনে এভাবে কপি দেখানোর নিয়ম নেই। যদি থাকে তাহলে আমি দেখাব।’
তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু মামলার ফটোকপি নথি দেখতে দেন। এরপর আইনজীবীকে মামলার শুনানি করার জন্য বিচারক নির্দেশ দেন।
মামলার শুনানির প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এই আসামিদের কাছে বাদী পাঁচ মাস আগে ছয়টি পণ্য অর্ডার করেছিলেন। তখন ৪৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বাদী টাকার জন্য গেলেও তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। আসামিদের উদ্দেশ্য কী এবং আর কারা কারা জড়িত তাদের বিষয়ে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।’
পরে রাসেলের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, এই মামলাটি দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৬ ও ৫০৬ ধারায় দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪০৬ ধারা হলো অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করা। আমাদের তো মনের মধ্যে অপরাধ নেই। বাদী অর্ডার করেছেন জুনে। তখন তো দেশে করোনা পেন্ডেমিক চলছে। এ ছাড়া আমরা দিব না এমন কথা বলিনি। করোনার কারণে সব কোম্পানি তাদের প্রোডাকশন বন্ধ করে রেখেছিল। আমরাও এই কারণে প্রোডাক্ট দিতে পারিনি। আর ৪৫ কার্যদিবসের কথা বলেছেন, সেটা আমরা দিতে পারিনি। তবে টাকা দিতে পারব না- এমন কথা আমরা কখনো বলিনি। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠির জবাব দিয়েছি ও সময়ের আবেদন করেছি। এ ছাড়া এ মামলায় দণ্ডবিধির ৪২০ ও ৫০৬ ধারা জামিনযোগ্য। তাই আমরা আসামির রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন চাচ্ছি।’
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে বাদী অর্ডার করলেন। আর আপনারা কোম্পানি এখনো প্রোডাক্ট তৈরি করছেন, এটা এমন কথা!’
এরপর বিচারক প্রত্যেক আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ ও আসামি শামীমা নাসরীনকে নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মো. রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় একজন গ্রাহক রাসেল ও শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রায় সোয়া তিন লাখ টাকা প্রতারণা, আত্মসাৎ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে মামলা করেন। এর পরই এই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার দেশের ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি জানায়, ইভ্যালির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।