পাঁচ মাস ধরে বন্ধ চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র
নানা জটিলতায় প্রায় পাঁচ মাস ধরে চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে চায়না চেংদা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর পর ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যায় কেন্দ্রটি। প্রথমদিকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও গ্যাসনির্ভর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়মিতভাবে ১৬০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছিল। কিন্তু দিনদিন গ্যাস সঙ্কটসহ বড়বড় যন্ত্রপাতি ও মেশিন অকেজো হয়ে যাওয়ার কারণে এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এদিকে বন্ধ হওয়ার প্রথমদিকে ৫০ মেগাওয়াট বন্ধ হলেও পরবর্তীতে ১০০ মেগাওয়াটের মাধ্যমে উৎপাদন সচল করা হয়। চাঁদপুর পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্যমতে ৩ ডিসেম্বর ২০২২ সালে চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রথম ৫০ মেগাওয়াট বন্ধ হয়। এরপর ৫ ডিসেম্বর বাকি ১০০ মেগাওয়াট বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মোহাম্মদ নূরুল আবছার বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়। এখানে দুটি মেগাওয়াট। একটি ৫০, আরেকটি ১০০ মেগাওয়াট। ১০০ মেগাওয়াটের ইউনিটটি ৫০ দিন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের পরে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেই। কিন্তু অনাকাঙ্খিত কারণে একটি গ্যাস বুস্টার চালু না হওয়ায় আমরা আর চালু করতে পারিনি। সে গ্যাস বুস্টারটি আমরা দেশীয় লোকবল এবং দেশীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে চেষ্টা করি। আসলে এটি ঠিক করতে হলে বিদেশি বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন। এরকম সূক্ষ্মকাজে বিদেশি অভিজ্ঞদের প্রয়োজন। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। গ্যাস বুস্টারটি ঠিক করার জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ মালামাল দেশে আসবে, তখন আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে পারব।”
অন্যদিকে গত কয়েকদিনে বিদ্যুতের ধারাবাহিক লোডশেডিংয়ের কারণে চাঁদপুরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের কারণে ভোগান্তির শিকার সাবই। বারবার লোডশেডিং হওয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছে মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের সাধারণ কাজকর্ম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বাংলাদেশ এর তথ্যমতে, চাঁদপুর জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৮৫ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদানুযায়ী সরবরাহ হচ্ছে ১৪৫ মেগাওয়াট। মূলত চাঁদপুর শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। আর গ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঙ্কট থাকায় চাঁদপুরে চাহিদার তুলনায় মাত্র ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছে গ্রাহকরা। যার কারণে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং হচ্ছে।