পাউবোর ঠিকাদারের অপরিকল্পিত খননেই তিনটি সেতু ভেঙে পড়ে
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদারের অপরিকল্পিত খননেই ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের শাখায় নদীতে নির্মিত তিনটি সেতু ভেঙে পড়ে।
এলাকাবাসী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অভিযোগ, পাউবোর অপরিকল্পিত খননের কারণেই সেতুগুলো ভেঙে পড়েছে। এতে গফরগাঁও ও হোসেনপুর উপজেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। সেতু তিনটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বোরাখালীতে শাখা নদীর ওপর সাত বছর আগে ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি, দুই বছর আগে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি এবং পাঁচ বছর আগে ৬০ ফুট দৈর্ঘের আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হয় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পাউবো বোরাখালী গ্রামের ওই শাখা নদীতে খননকাজ শুরু করে।
সেতুগুলো ভেঙে পড়ায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বোরাখালী, চরহাজীপুর, বগামারা, রিকশাখালী, চরঝিনারি, টেকিরচরসহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে। অবিলম্বে সেতু মেরামতের দাবি জানিয়েছে তারা।
বোরাখালী গ্রামের শাহপরান জানান, সাত বছর আগে নির্মিত সেতুতে ২৮ মে দুপুর থেকে ফাটল দেখা দেয়। সন্ধ্যায় হঠাৎ বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে সেতুটি।
একই গ্রামের রাশিদ জানান, ২৫ মে রাতে ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটি ভেঙে পড়ে। এর একদিন পর পাঁচ বছর আগে নির্মিত সেতুটিও ভেঙে পড়ে।
সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়ে ঠিকাদার মাহমুদ হাসান সজিব বলেন, টেন্ডারে চাহিদা মোতাবেক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কেন সেতু ভেঙে পড়েছে সেটা তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে।
এ বিষয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে নদী খনন শুরু করে পাউবো। সেতু নির্মাণের আগে নদীটি ছিল সরু। দরপত্রের শিডিউল অনুযায়ী পাঁচ ফুট গভীরে বেইজমেন্ট করে সেতু নির্মাণ করেন ঠিাকাদার। কিন্তু পাউবো কর্তৃক সেতুর কাছে আট-দশ ফুট গভীর করে খনন করায় পানির চাপে মাটি সরে বেইজমেন্টে ফাটল ধরে সেতু ভেঙে পড়ে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের খবর দিতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মুছা সেতু ভেঙে পড়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করে বলেছেন, নদীতে সেতু করতে হলে পাউবোর অনুমতি লাগে। তারা অনুমতি না নিয়ে পাইলিং ছাড়াই সেতু করেছে। পাইলিং না করে সেতু তৈরি করায় সেতু ভেঙে পড়েছে। এতে পাউবোর কী করার আছে?
সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন, চরআলগী গ্রামের জিয়ারুল, রফিকুল, লিটন, রশিদ ও শাহ পরান। তারা জনস্বার্থে সেতু ভেঙে পড়ার বিষয়টি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে বিচার দাবি করেছেন।
এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমের আগেই দ্রুততম সময়ে নতুন করে সেতু নির্মাণ করে জনগণের ভোগান্তি দূর করতে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেও তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।