পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পক্ষে কথা বলে তোপের মুখে বিএনপির সাংসদ
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের পক্ষ নিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, কোনো দেশের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব দেখানো ঠিক নয়। এই বক্তব্যের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পরেন হারুন।
আজ শনিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন হারুন। তিনি বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি দলের সদস্যরা তুমুল হইচই করে প্রতিবাদ জানান। তাঁর এ বক্তব্যের জবাবে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংসদ সদস্য হারুন যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে তাঁদের চরিত্র বেরিয়ে এসেছে।
পয়েন্ট অব অর্ডারে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হচ্ছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। পাকিস্তান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছে। বাংলাদেশ যা–ই খেলুক না কেন, পাকিস্তানের সমর্থকরা তাদের পতাকা ওড়াচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের দেশে মেহমান, অতিথি। আমাদের দেশের ক্রিকেট, আমাদের দেশের ফুটবল, আমাদের দেশের মেয়েরা সারা পৃথিবীতে খেলছে। সেখানে পতাকা ওড়ে না বাংলাদেশের?’
হারুন আরও বলেন, ‘সেদিন একজন সদস্য দেখলাম বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেছেন।’
এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা হইচই করে হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। হারুন বলেন, ‘পাকিস্তান টিম তো আসার দরকার ছিল না। পাকিস্তানি টিমকে কেন খেলতে দিয়েছেন? খেলতে দিতেন না। দরকারই ছিল না। আপনি তো তাদের অনুমতি দিয়েছেন। তারা এখানে এসেছে। এটি ঠিক নয়। একটি দেশের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ঠিক নয়। এটি আমাদের জন্য সম্মানের নয়, গৌরবের নয়।’
এ সময় ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে হারুন বলেন, “বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘ভারত বার্মার মতো অতীত থেকে মুখ ফিরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অতীতের তিক্ততা দূর করতে কোনো প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হইনি। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন করে উপমহাদেশে শান্তি সহযোগিতার নতুন ইতিহাস রচনা করেছি। আমরা আমাদের আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছি’।”
সংসদ সদস্য হারুন আরও বলেন, দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন, এটি তার ঐতিহাসিক দলিল।
এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা ব্যাপক হট্টগোল করলে হারুনুর রশীদ স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কথা বললাম, এখানেও যদি বাধা দেন, তাহলে আর কী বলব মাননীয় স্পিকার। আমি এমন কিছু বলিনি, আমি ওনার ভাষণ পড়ে শুনিয়েছি।’
এর পর হারুন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদারের প্রসঙ্গ টানেন। কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে হারুন বলেন, সাক্ষী–আলামত ছাড়া কাউকে হত্যা করা একেবারে গোনাহর কাজ। অষ্টম ও একাদশ সংসদের সদস্য আবদুল মোমিন তালুকদার, তাঁর বয়স তখন (১৯৭১ সালে) ১৮ বছর ছিল। উনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ২০১১ সালে জাতিসংঘের কনভেনশনে গিয়েছেন।
এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় সদস্য, আপনি এখানে কোনো বিচারের বিষয়ে কথা বলতে পারেন না। বিচার হয়েছে, আপনি বসুন।’ পরে তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাব দেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশিদ যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে সংসদে কথা বললেন, এতে তাঁর প্রকৃত চরিত্র বেরিয়ে এসেছে। তাঁরা যে রাজাকার, আলবদর, আলশামসের পক্ষে কথা বলছেন ও রাজনীতি করছেন, তাঁরা যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জাতির জনককে হত্যার পর জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের শুধু লালন–পালনই করেননি, পাকিস্তানি ধারা বাংলাদেশে প্রবর্তন করার জন্য সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন। একই ধারায় তাঁরা এখনো রাজনীতি করে যাচ্ছেন। এর প্রমাণ আজ হারুনুর রশিদ সংসদে উপস্থাপন করলেন।’
নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান অপরাধ করেছে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু শান্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন। তাঁর সেই অহিংস ও শান্তিকে বিকৃত করে সংসদে উপস্থাপন করার চেষ্টা হচ্ছে।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তারা মনে করেছিল যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে না। এ বিচার হওয়ায় তাদের সেই মনোকষ্ট ফুটে উঠছে। তাঁর বক্তব্যে বেরিয়ে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। তাদের সঙ্গে অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা হয়নি। তার মানে এই নয় যে, সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ সরে গেছে।’