পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল একাধিক চিঠি
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খুলে গতকাল রোববার রেকর্ড পরিমাণ তিন কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গেছে। যা এর আগের প্রাপ্ত টাকার পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে। নগদ টাকা ছাড়াও সিন্দুকে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে। পাশাপাশি মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার আর্তি জানিয়ে বেশ কয়েকটি চিঠি পাওয়া গেছে। যা দেশজুড়ে বেশ আলোচনায় এসেছে।
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রতিবার দানসিন্দুক খোলার পর টাকা-পয়সার পাশাপাশি এ রকম কিছু চিঠিও পাওয়া যায়। এসব চিঠির লেখকরা সৃষ্টিকর্তা বরাবরে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে ও মনের বাসনা পূর্ণ করতে নিবেদন জানিয়েছেন। তাতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আকুতি-মিনতি জানানো হয় নিজেদের লিখিত ভাষায়।
একটা চিঠিতে লেখা আছে, আমার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করিয়ে হাফেজ বানানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত সাতটি মাদ্রাসা পরিবর্তন করেও তার লেখাপড়ায় মনোযোগ বসেনি। এখন আমি আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, যেন সে একজন হাফেজ হতে পারে।
আরেক চিঠিতে তিনজনের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে লেখা আছে, এই তিনজন আমার শত্রু। তাদের অত্যাচারে আমি মনে কষ্ট নিয়ে ঘুরি। আল্লাহ, আপনি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের বিচার করুন।
অন্য একজন লিখেছেন, ‘পাগলা মসজিদের রহমতে আমার স্বামী যেন অনেক টাকা-পয়সার মালিক হয়। সব ঋণ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষের কটু কথা থেকে মুক্তি পায়। আল্লাহ তুমি রহমত করে আমার স্বামীর সব দুঃখ কষ্ট দূর করে দাও। আল্লাহ তোমার দরবার থেকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না।’
মসজিদের মুসল্লি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ফকির মতি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতের আশায় এই মসজিদে যেমন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ নামাজ পড়তে আসে, তেমনি মনের কামনা-বাসনা পূরণে টাকা-পয়সা দান করে থাকেন। সেই ধারণা থেকেই দানসিন্দুকে আল্লাহর রহমত কামনা করে অনেকেই চিঠি দিয়ে যায়।’
পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, চিঠিগুলো আপাতত সংরক্ষণ করা হবে। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে চিঠিগুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে।
গতকাল সকাল ৯টায় মসজিদের আটটি দানসিন্দুক খোলার সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গণনা শেষ হয়। টাকা গণনায় মসজিদ ও মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্র-শিক্ষক, রূপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১০ জন আনসার এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৯ জুন দানসিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তখন খোলা হয়েছিল চার মাস ২৬ দিন পর। এবার চার মাস ১৭ দিন পর খোলা হয়েছে।
সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট তিনতলা বিশাল পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জে অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদটি প্রায় চার একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। মসজিদ কমপ্লেক্সের অধীনে আছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা।
কথিত আছে, প্রায় পাঁচশত বছর আগে বাংলার বারো ভূঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারদের অন্যতম ঈশা খাঁর আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামের একজন ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরে ওই স্থানটিতে মসজিদটি নির্মিত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারেই মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়।