পাচারের টাকা দেশে আনার সুযোগ অগ্রহণযোগ্য : সিপিডি
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগকে অগ্রহণযোগ্য বলছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিকভাবে এই সুযোগ অগ্রহণযোগ্য বলছে তারা।
আজ শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
‘পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগকে সিপিডি সমর্থন করে না’ উল্লেখ করে সিপিডি বলছে, ‘পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দিলে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁরা হতাশ হবেন। যাঁরা সৎভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁরা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ওপর পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আগামী অর্থবছর সরকার মূল্যস্ফীতির হার পাঁচ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। কিন্তু, কোন জাদুবলে এ লক্ষ্য অর্জিত হবে অর্থমন্ত্রী তা বলেননি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পাচার হওয়া টাকা সাড়ে সাত শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগের প্রস্তাব করেন। প্রথমবারের মতো পাচারকারীদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সাড়ে সাত শতাংশ কর দিয়ে টাকা আনলে দেশের অন্য কোনো আইনে তাঁকে প্রশ্ন করা হবে না।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি থাকলে দেশের আয়কর রিটার্নে দেখাতে চাইলে ১৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। এ ছাড়া অস্থাবর সম্পত্তির ওপর ১০ শতাংশ এবং পাচার হওয়া টাকা দেশে আনলে সেই টাকার ওপর সাত শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবেন যে কেউ। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে না সরকার। তাঁকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না।’
আজকের সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘এর আগেও দেখা গেছে, বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, খুব কমসংখ্যকই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছে। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক তিনভাবেই অগ্রহণযোগ্য।’
পি কে হালদারের উদাহরণ টেনে এ সুযোগ খুব একটা কাজে আসবে না বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিশেষ কিছু মানুষকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি।
সিপিডি বলছে, বাজেটে সৃজনশীলতার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার পাঁচ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। বাজারে গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম, তার সঙ্গে সরকারের তথ্যের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী হয়তো ভাবছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা মহামারিসহ বর্তমান সংকট দ্রুত কেটে যাবে। কিন্তু, কোন জাদুর কাঠি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো হবে, সে পথ দেখাননি অর্থমন্ত্রী।’