পাবনায় টেন্ডার ছাড়া জেলা পরিষদের গাছ কাটার অভিযোগ
পাবনা জেলা পরিষদের আওতাধীন বিভিন্ন সড়ক ও ডাকবাংলোর গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগসূত্র বলছে, নিয়ম না মেনেই এসব গাছ কাটা হয়েছে। সেই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোর ফার্নিচার। পরে সরেজমিনে এই প্রতিবেদক অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। যদিও জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেছেন, ‘যেগুলো মরে গিয়েছিল, সেগুলো বিনা টেন্ডারে কেটে রাখা আছে।’ আর টেন্ডার প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, ‘টেন্ডার আহ্বান করলে অন্যরা লাভবান হয়, এ জন্য টেন্ডার হয়নি।’
জেলা পরিষদের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, কাঠুরিয়া গাছ কাটছেন। পরে সেগুলো করাত কলে নিয়ে কাঠ তৈরির পরে সেই কাঠ বিভিন্ন ডাকবাংলোতে পাঠানো হচ্ছে। এরপর চলছে ফার্নিচার তৈরির কাজ।
ডাক বাংলোসূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ঈশ্বরদী ও চাটমোহর ডাক বাংলোতে কমপক্ষে ৬০টি খাট, ৩০টি দরজা এবং ৪০ থেকে ৬০টি আলমারিসহ বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরি করা হয়েছে।
বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, আইন অনুযায়ী উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঝড়ে পড়া, মরে যাওয়া, ঝুঁকিপূর্ণ, পুরনো গাছ কেটে ফেলার প্রয়োজন হলে টেন্ডার ও নিলামসহ আনুসঙ্গিক নীতিমালা মেনে সেগুলো কাটতে হবে।
জানা গেছে, জেলা পরিষদ এই নীতিমালা মানেনি। যদিও জেলা পরিষদের গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও কাটাসহ যাবতীয় বিষয়ে দায়িত্বে থাকা পরিষদের সার্ভেয়ার মো. রিয়াজুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘বনবিভাগের অনুমতি, উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির রেজুলেশন ও পেপার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই গাছ কাটা হয়েছে। কিন্তু, যেগুলো মরে গিয়েছিল, সেগুলো বিনা টেন্ডারে কেটে রাখা আছে। ফার্নিচার কোন কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি জানি না। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।’
পাবনা জেলা পরিষদের বিদায়ী চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘গাছ কাটার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনি এই বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেন। উনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, ‘এমন সংবাদে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। পরে আমি নিজেই সরেজমিনে জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে গিয়ে দেখেছি, সেখানে কিছু গাছকাটা হয়েছে। ডাক বাংলোর কেয়ারটেকারকে জোরালভাবে জিজ্ঞাসা করায় সেও স্বীকার করেছে।’
আব্দুর রহিম আরও বলেন, ‘যারা দুর্নীতি করছে, সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের প্রতিহত করব এবং জেলা পরিষদের সুফলটা একেবারে গ্রাম ও তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেব।’
পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) কাজী আতিয়ুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো কাটা হয়েছে। কোনো খাড়া গাছ কাটা হয়নি। এজন্য পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছিল।’ টেন্ডার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টেন্ডার আহ্বান করলে অন্যরা লাভবান হয়, এ জন্য টেন্ডার হয়নি।’
এ বিষয়ে পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র বলেন, ‘জেলা পরিষদের গাছ কাটার বিষয়টি জানি না, আপনাদের কাছে থেকে প্রথম শুনলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দেই, বাকিটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান করে।’