পাবনায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন, দামে খুশি কৃষক
পাবনার সাঁথিয়ায় এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকও। ফলে কিষান-কিষানির মুখে ফুটেছে হাসি।
পাবনা জেলায় সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত সাঁথিয়ার কৃষকরা নভেম্বর মাসের শেষ দিকে এবারও ব্যাপকভাবে পেঁয়াজের আবাদ করেছিল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পেঁয়াজ চাষ লাভজনক হওয়ায় এবং প্রায় ৯০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ ঘরে তোলা যায় বলে এবারও কৃষকরা পেঁয়াজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। যথাসময়ে সেচ ও সারের পর্যাপ্ত সরবারহ এবং অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় চলতি মৌসুমে সাঁথিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সাঁথিয়ার পেঁয়াজ দিয়েই দেশের অনেকটা চাহিদা মেটে। উপজেলার সর্বত্রই শুরু হয়েছে পেঁয়াজ তোলা, কাটা ও বাছাইয়ের কাজ। পেঁয়াজ তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কিষান-কিষানিরা। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ সাঁথিয়ায় চাষ হয় এবং দেশের মোট চাহিদার শতকরা প্রায় সাত ভাগ পেঁয়াজ সাঁথিয়ায় উৎপাদিত হয়।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে সাঁথিয়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। এবার বারি-১ পেঁয়াজ, তাহেরপুরী, লাল তীর, মেটাল ও ইউনাইটেড জাতের পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বারি-১ জাতের পেঁয়াজ। তবে দিন দিন বাড়ছে লাল তীর জাতের পেঁয়াজের আবাদ। পেঁয়াজ উৎপাদনের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৮৬ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন। এবার পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং উপজেলায় পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জীব কুমার গোস্বামী জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে চারা পেঁয়াজ নতুন এবং উন্নত জাত ইউনাইটেড ও লাল তীর আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া উফসি ও হাইব্রিড জাতের আবাদও দিন দিন বাড়ছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত এলাকাভিত্তিক মাঠ পরিদর্শন, মাঠ দিবস, কৃষক সমাবেশ করে চাষিদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া কৃষকদের যাতে আবাদে খরচ কম ও ক্ষতি না হয় সেজন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে এবং মনিটরিং করা হয়েছে। আমাদের কৃষকরা যদি যত্ন নেয় তাহলে এবার প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় এবং কৃষি উপকরণ যেমন- বীজ, সার, বালাইনাশক সহজলভ্যতার কারণে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পোঁজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার চকপাট্টা গ্রামের পেঁয়াজচাষি আফতাব মণ্ডল, গৌরীগ্রামের আলমগীর হোসেন, ধাতালপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান, কালাইচারা গ্রামের আ. আলীমসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে শ্রমিক, সেচ, সার, কীটনাশক, পেঁয়াজ তোলা, কাটা ও বাছাই বাবদ খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এবং মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পেঁয়াজ এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও পরবর্তী সময়ে প্রতি মণ পেঁয়াজ দুই হাজার থেকে তিন-চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এতে তাদের খরচ বাদে অন্যান্য ফসলের তুলনায় মোটামুটি বেশি লাভ হয়।