পিরোজপুরে নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে, প্লাবিত অর্ধশত গ্রাম
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পিরোজপুর জেলায় দমকা হাওয়া বা বৃষ্টি না থাকলেও আজ বুধবার নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জেলার প্রধান নদী কচা ও বলেশ্বরের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত এলাকাগুলোতে ঘুরে ঘুরে ত্রাণ সরবরাহ করছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের সময় জেলার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ফসলের মাঠ, বাড়িঘর, হাটবাজার, ফেরিঘাট তলিয়ে গেছে।
মঠবাড়িয়া পৌরসভার দক্ষিণ বন্দর এলাকা, থানাপাড়া, উপজেলার বড়মাছুয়া, মিরুখালী, দাউদখালী, তুষখালী, ধানীসাফা, বেতমোর ও টিকিকাটা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইন্দুরকানি উপজেলার ১০ গ্রাম, কাউখালী উপজেলার ৩০টি, ভাণ্ডারিয়া উপজেলা সদরসহ ১০টি, নাজিরপুরে ১৫টি, নেছারাবাদ উপজেলার ১৫টি ও পিরোজপুর সদর উপজেলার ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার চরখালী, আমরাজুড়ি, সোনাকুর, বেকুটিয়া ফেরিঘাট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন ও মানুষ চলাচলে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে
পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, জোয়াড়ে পানি উঠে আবার ভাটায় নেমে যায়। অনেক স্থানে ঘর ডুবে গেছে। হাত-পা ধুয়ে বিছানায় উঠলেই হয়। রান্নাঘর ডুবে গেছে, রান্না বন্ধ। না খেয়েই থাকতে হচ্ছে। পানি বাড়ায় নৌকা নিয়ে বের হতে হচ্ছে। চারপাশে পানি থৈ থৈ করছে। পানি বাড়ছে বাড়ি না ডুবলেও মাছের ঘের ডুবে গেছে, মাছ বের হয়ে যাচ্ছে। অনেক বাড়ির সামনের প্রধান সড়কে হাঁটুসমান পানি উঠেছে। বাড়ির অসবাবপত্র সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনিও) বশির আহম্মেদ বলেন, ‘ঘূণিঝড় ও তীব্র জোয়াড়ের কারণে পানি বেড়েছে। যারা ঝুঁকিতে আছে অর্থাৎ যারা নিচু এলাকায় তাদের আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকতে বলছি। ঘূর্ণিঝড় উড়িশায় আঘাত হেনেছে। যার কারণে আমাদের জোয়াড়ের পানি ছাড়া আর তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্লাবিত গ্রামগুলোর অসহায় মানুষকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কাজ করেছেন। কোথাও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। আমরা প্লাবিত এলাকাগুলো ঘুরে ঘুরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় জেলার সাত উপজেলায় ৫৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া ৪৪৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা রয়েছে। এর মধ্যে ২৩৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৩২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলায় মোট ৬৮টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।’