পি কে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ৫ মামলা
প্রায় ৪৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই সঙ্গে পি কে হালদারের সহযোগী ৩৩ জনের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত ৯ মার্চ ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০টি মামলার অনুমোদন দিয়েছিল দুদক। এর মধ্যে আজ পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রতিটি মামলায় পি কে হালদারকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাগুলোতে লিপারো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ১৭৪ কোটি টাকা, আর বি এন্টারপ্রাইজের নামে ৫৫ কোটি টাকা, ওকায়ামা লিমিটেডের নামে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ইমেক্সোর নামে ৫৮ কোটি টাকা ও কনিকা এন্টারপ্রাইজের নামে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৯ মার্চ দুদক পি কে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ৮০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে পৃথক ১০টি মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়। অনুমোদন দেওয়া প্রতিটি মামলায় রিলায়েন্স লিজিং ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারকে আসামি করা হয়।
এ ছাড়াও মামলাগুলোতে অন্য আসামিরা হলেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, এমডি মো. রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. আবেদ হোসেন এবং প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্যসহ পি কে হালদারের সহযোগীরা।
এ দিকে দায়েরকৃত পাঁচ মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মো. রাশেদুল, ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. আবেদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম পি কে হালদারের সঙ্গে সহযোগিতা ও প্রতারণার মাধ্যমে কোনো মর্টগেজ গ্রহণ ছাড়াই পাঁচটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩৪ কোটি ছয় লাখ টাকা ভুয়া ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এরপর বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে ওই অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় মো ৩৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ মার্চ বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ওইদিন বিকেলেই দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রবিউল আলমের আদালত শুনানি শেষে তিনজনকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠায়।
পি কে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ১৬ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
দুদকের করা অর্থ পাচারের পৃথক মামলায় গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেপ্তার করে দুদক। ওইদিনই তাকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠায় ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত। গত ২৭ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ৪ মার্চ দ্বিতীয় দফায় তাকে আরও তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। দুই দফায় রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে পাঠায় দুদক।
অবন্তিকা বড়াল ছাড়াও এ কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে এখন পর্যন্ত পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়াও পি কে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী ও রাশেদুল হক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।