পুরস্কৃত হতে পারেন টিটিই শফিকুল!
বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করায় রেলমন্ত্রীর তিন আত্মীয়কে জরিমানা করায় সাময়িক বহিষ্কার ও পরে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের সেই ভ্রাম্যমাণ টিকেট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে দেওয়া হতে পারে পুরস্কার। পুরস্কারের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন খোদ রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তবে তদন্তে উঠে আসতে হবে সেই ঘটনার সত্যতা।
আজ রোববার দুপুরে রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেছেন রেলমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি ওই টিটিইর বরখাস্তের পেছনে নিজ স্ত্রীর সম্পৃক্ততার ঘটনায় বিব্রত বলে জানিয়েছেন।
টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত ছাড়া বরখাস্ত করায় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কেন এত দ্রুত সময়ে টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এ জন্য পাকশির ডিসিওকে শোকজ করা হয়েছে।’
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার রেলসেবা বাড়াতে কাজ করছে। বিনা টিকেটের যাত্রী যদি আমার আত্মীয়ও হয়, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। একইভাবে কোনো রেল কর্মকর্তা যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, তাঁকেও শাস্তি পেতে হবে। ঘটনা সত্য হলে টিটিইকে পুরস্কৃত করাও হতে পারে।’
গত বুধবার রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকেটে ভ্রমণের অপরাধে তিন যাত্রীকে জরিমানা করেন ওই ট্রেনের টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে শফিকুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসিও নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমার কাছে যেভাবে তাঁরা (যাত্রী) লিখিত দিয়েছেন এবং তাঁরা বলেছেন—তাঁরা টিকিট পাননি। টিকিট না পেয়ে তাঁরা ট্রেনে উঠে পড়েন, যেখানে জায়গা পেয়েছেন, ওখানেই। টিটি সাহেব গিয়ে তাঁদেরকে জরিমানা করেন।’
‘টিটিদের এটি বেসিক ডিউটি’ উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘টিটি সাহেব তাঁদের কাছে ৫০০ টাকা চেয়েছেন, তাঁরা ৫০০ টাকা করেও দিয়েছেন। দেওয়ার পর তাঁরা (যাত্রী) যখন টিকিট চেয়েছেন, তখন টিটি সাহেব বলেছেন—এ টাকায় টিকিট দেওয়া যাবে না। আপনাদের টিকিট লাগবে না, চলে যান। তখন যাত্রীরা বলেছেন, টাকা যখন দিয়েছি, কমলাপুরে আমাদেরকে ধরবে, আপনি আমাদের টিকিট দেন।’
নাসির বলেন, ‘মূলত এখান থেকেই এক কথা, দুকথায় অপ্রীতিকর একটি ঘটনা ঘটেছে। এরপর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা তাঁকে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্ত করি এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে দিই।’
এদিকে ওই তিন যাত্রীর একজন রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারের মামাতো বোন ইয়াসমিন আক্তার নিপার ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত এবং বাকি দুজন নিপার চাচাতো ভাই ওমর ও হাসান বলে জানা যায়।
ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা এনটিভি অনলাইনকে জানান, ছেলেদের সঙ্গে অসদাচরণ করার কারণে টিটিইকে বদলি করতে মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তারকে বলেছিলেন। তখন শাম্মী তাঁকে (নিপা) জানান, বদলি না বরখাস্তই করে দিচ্ছেন। এরপর শাম্মী রেলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বরখাস্ত করতে বলেন।
রেলপথমন্ত্রীর স্ত্রীর ‘মামাতো বোন’ দাবি করে নিপা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার ছেলে একটা গ্রাজুয়েট। ছেলেটা এতো নিরীহ যে কোনো ঝামেলায় থাকে না। আমরা রেলমন্ত্রীর রিলেটিভ হয়ে এখন আমাদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। আমরা টিকিট কেটে উঠি, আমাদের কেবিন নিতে হয়, বকশিস দিতে হয়।’
নিপা আরও বলেন, ‘আমার ছেলেটা টিকিট কেটে উঠত। টিকিট নেই, কিন্তু, টিকিট বানিয়ে নিয়েছে। গার্ড আলমকে দিয়ে টিকিট বানিয়ে নেওয়া হয়েছে, তিনটি টিকিট এক হাজার ৫০ টাকা দিয়ে।’
রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ‘মামাতো শ্যালিকা’ নিপা বলেন, ‘ওইদিন তো অনেক সিট খালি গেছে। কেবিনও খালি গেছে। তখন গার্ড মন্ত্রীর রিলেটিভ বলে সম্মান দেখিয়ে সহযোগিতা করে কেবিনে বসার সিট করে দিয়েছে। এরপর ওই টিটিই শফিকুল বলেছে যে, আপনারা কেবিনে কেন? তখন গার্ডের নাম ধরে বলছে যে, উনি আমাদের বসিয়ে দিয়েছেন। এরপর টিটিই শফিকুল বলেন যে, রেল কি ওর বাপের? যাকে তাকে বাসাবে? তখন বলছে যে, আমরা রেলমন্ত্রীর রিলেটিভ। তখন টিটিই বলেছে, রেলমন্ত্রীর রিলেটিভ হোক, আর যেই হোক...। এ কথা বলে সে খারাপ করছে।’
নিপা বলেন, ‘টিটির ওই ঘটনার পর আমার ছেলে রাত তিনটার দিকে আমাকে ফোন দেয়। তখন আমার কাছে শুয়ে ছিল শাম্মী আক্তার (রেলমন্ত্রীর স্ত্রী)। তখন আমি ওকে বললাম, ধর তো ফোনটা, কী বলছে ছেলে।’
এরপর টিটিইকে বদলি করার কথা বললে শাম্মী বরখাস্তের কথা বলেন, জানান নিপা।
এ বিষয়ে জানতে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে আজ রোববার রেল ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রেলমন্ত্রী সুজন জানান, মাত্র ৯ মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। নতুন যে স্ত্রীকে আমি গ্রহণ করেছি, সে ঢাকাতেই থাকে। তাঁর মামাবাড়ি ও নানাবাড়ি হলো পাবনা। আমি শুনেছি তাঁরা আমার আত্মীয়। এটা এখন ঠিক, যেটা আমিও এখন শুনেছি। এর আগে পর্যন্ত আমিও জানতাম না, এঁরা কারা এবং আমার জানার কথাও না।