পুলিশ চেয়েছিল কিন্তু পারেনি সংঘর্ষ থামাতে
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোমবার রাত থেকে ইট-পাটকেল ছোড়াছুড়ি এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এমন পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছিল না। সোমবার রাতের পর আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে শুরু করে বারবার ঘটে এমন ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা।
এ পরিস্থিতিতে পুলিশের এক সদস্য ঢাকা কলেজের প্রবেশদ্বারের ঠিক উল্টা পাশের সড়ক থেকে আঙুল উঁচু করে শিক্ষার্থীদের থামতে বলেন। সময় তখন দুপুর ২টা ৩২ মিনিট। ওই পুলিশ সদস্য বলতে থাকেন, ‘আপনারা আর গণ্ডগোল করবেন না। আলোচনা করেন। সবারই ক্ষতি হচ্ছে।’
পুলিশের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঢাকা কলেজের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিক্ষার্থী প্রথমে এগিয়ে আসেন। এরপর একে একে আরও অনেক শিক্ষার্থী এগিয়ে আসেন। এরমধ্যে একজন শিক্ষার্থী পাকা রাস্তার ওপর কাঠ দিয়ে আঘাত করতে করতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করতে করতে ওই শিক্ষার্থী পুলিশকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, ‘আপনারা ওদের (দোকানি-ব্যবসায়ী) সঙ্গে মিশে আমাদের ওপর হামলা করছেন। ঢাকা কলেজের দিকে লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ছুড়ছেন। এটা কেমন দেশ? আপনারা কোথায় গণ্ডগোল থামাবেন কিন্তু এক পক্ষ নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।’
সে সময় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের সঙ্গে কথা বলতে যান। হঠাৎ কয়েকজন দোকানি ইটের খোয়া ছুড়তে শুরু করেন। এ দৃশ্য দেখার পর শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। তখন পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর পুলিশও ২টা ৩৬ মিনিটে দুই রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে।
সে সময় ব্যবসায়ীরাও শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটের খোয়া ছুড়তে শুরু করে। তখন শিক্ষার্থীরাও কলেজের প্রবেশদ্বার ও ১০তলা ভবন থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। ২টা ৪৪ মিনিটে পুলিশ আবারও ডিএমপির একটি গাড়িতে করে এসে টিয়ারশেল ছুড়তে শুরু করে। তখন নিউ মার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ্ টিয়ারশেল ছুড়তে নিষেধ করেন। শাহেন শাহ্ বলেন, ‘এখন তাদের বুঝিয়ে থামাতে হবে। আর কোনো ঝামেলা নয়।’
এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পর বিকেল ৪টার দিকে সংঘর্ষ থেমেছিল। আমরা আশা করছিলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিকেল সোয়া চারটার দিকে আবার সংঘর্ষ বেঁধে যায়। আমরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।’
এরপর পুলিশ সদস্যরা ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তারা কেউ রাস্তা থেকে সরতে চাচ্ছিলেন না। না শিক্ষার্থী, না ব্যবসায়ীরা। তবে, পুলিশ দফায় দফায় সমঝোতার চেষ্টা করেন দুপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু, কোনো সমাধান হয়নি। বরং দফায় দফায় আরও বেশি সংঘর্ষে জড়ান তাঁরা।
তবে, আজকের সংঘর্ষের প্রায় দুঘণ্টা পর ঘটনাস্থলের দিকে এগুতে থাকে পুলিশ। দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিটে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারশেল ছোড়া গাড়ি নিয়ে হাজির হন নিউ মার্কেটের ওভারবিজ্রের নিচে। এর প্রায় ৫০ মিনিট পর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়তে শুরু করেন তারা। যদিও বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও জলকামান ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
এর মধ্যে দফায় দফায় দুপক্ষের সংঘর্ষ চলতে থাকে। শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ সংলগ্ন এলাকার ভবনগুলো থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। একইসঙ্গে দোকানিরা বিভিন্ন মার্কেটের ওপর ও সড়ক থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সংঘর্ষ শুরুর প্রায় দুই ঘণ্টা পুলিশের কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।